Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

অনেক মানুষ দেখা যায় যারা কিনা নিজেদের ভালো মানুষ মনে করে। এইসব ভালো মানুষেরা আবার কিছু কিছু মানুষকে খারাপ মানুষ বলে চিহ্নিত করে। ভালো মানুষেরা যারা অন্যদেরকে খারাপ মানুষ বলে দাবী করে তারা আসলে নিজেদের কি মনে করে? দেখা গেছে বেশীরভাগ সময় সেইসব খারাপ মানুষের কাছে তারা নিজেরাই ভালো, অন্যরা খারাপ। এখানে দেখা যাচ্ছে বেশীরভাগ সময়েই কেউই নিজেদের খারাপ মনে করেনা, আর একেকজন বা একেক গ্রুপের কাছে খারাপের সংজ্ঞা একেকরকম। খুব বিরল কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেক ভালো মানুষ আছে তারা নিজেদের খারাপ মানুষ মনে করে, একইভাবে অনেক খারাপ মানুষ আছে যারা কিনা নিজেদের ভালো মানুষ মনে করে থাকে। ভালো-খারাপের ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে হয়ে যায় তাই না?! সত্যি ব্যাপারটা একটু গোলমেলে বটে, তবে বোধগম্য।
দেখা গেছে যারা নিজেদের ভালোত্ব নিয়ে critically চিন্তাভাবনা না করেছে তারা সমগ্র মানব জাতির জন্য ভয়ানক, এমনকি তারা নিজেরাও নিজেদের প্রতি ভয়ানক। ভালো মানুষেরা সবাইকে খুশি রাখে, আর সবাইকে খুশি করতে গিয়ে তারা নিজেরাই হয়ে পড়ে ভীষণভাবে অসুখী। এইসব ভালো মানুষেরা যখন অন্য কাউকে দেখে যারা অন্যদেরকে খুশি করার চিন্তায় জীবন উৎসর্গ করছে না বরং নিজের প্রয়োজনগুলো মেটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদেরকে সেই তথাকথিত ভালো মানুষেরা স্বার্থপর মনে করে খারাপ বলে আখ্যায়িত করে। সেইসব ভালো মানুষেরা যাদেরকে খারাপ বলে আখ্যায়িত করছে তারা বেশীরভাগ সময়ই ভালো মানুষগুলোর চিন্তা ও আচরণের বিপরীত দিকে চলে। তার মানে দেখা গেলো যারা কাজে ও চিন্তায় আমাদের দেখে আলাদা তাদেরকে সামগ্রিকভাবে না চিনেই আমরা খারাপ বলে আখ্যায়িত করে থাকি।
এই ভালো খারাপের সংজ্ঞা আমাদের জীবনের প্রাথমিক ধাপেই আমাদের মাথায় ঢুকে যায়। ভালো – মন্দের সংজ্ঞা তাই রিলেটিভ। যে বাচ্চা শিখেছে অন্যকে সুখি করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ, অন্যের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়াতেই জীবনের স্বার্থকতা, সে সাতপাঁচ চিন্তা না করেই স্বতঃপ্রোতভাবেই সেই রোল প্লে করে যাবে। যে মেয়েটা শিখেছে কোন তর্ক না করে সব কিছু মেনে নিতে, বড় হয়েও সে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঘরে বাইরে কর্মক্ষেত্রে সব মেনে চলবে, এমনকি সেটা যদি তার মনের শান্তি, রাতের ঘুমও হরণ করে। এইসব ভালো মানুষেরা যারা নীতিকথা মেনে না চলে, পরিবার-সমাজের শাসন-বারণ অনুসরণ না করে চলে তাদেরকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করবে। তাদের ন্যারেটিভে রেবেলিয়াস যারা তারা সবাই ভিলেইন, অশান্তি সৃষ্টিকারী।
যে বাচ্চা কথা শুনেনা, তর্ক করে, নিজের সুখ নিজের হাতে গড়ে, বাইরের ঝড়-ঝাপটাতে কিংবা প্রতিকূলতাতেও নিজস্বত্বাটুকু বিলীন হতে দেয় না, যাদেরকে খারাপ আখ্যায়িত করে পরিবার-সমাজ পরিত্যাগ করলেও হার মানেনা ভালো মানুষদের দল ভারী করার জন্য তাদের ন্যারেটিভে সেইসব ভালো মানুষেরাই ভিলেইন।
ভালো-খারাপ আসলে একটা গল্পের ভিন্নধর্মী দুটি চরিত্র, যে চরিত্র দুটির সম্মিলনে তৈরি হয় পুরোটা গল্প। যে বাচ্চাটা ছোট থেকে জেনে এসেছে সে খারাপের দলে পড়ে, যাকে সবাই গাল-মন্দ করে এসেছে কথা না শোনার জন্য সেই বড় হয়ে এমন কিছু করতে পারে যার জন্য সমাজ-সংসারের অনেক উপকার হয়। অথচ যে কিনা নিজেই মনে মনে নিজেকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবেই দেখে। অপরপক্ষে যে মানুষটা সবার চোখে ভালো হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, সবাই যেখানে তাকে ভূয়সী প্রশংসা করে এসেছে সেই মানুষটাই এমন কিছু করতে পারে যার কারণে পরিবার-সমাজের এমনকি তার নিজেরও অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অথচ যে কিনা নিজেকে মনে মনে একজন ভালো মানুষ হিসেবেই মনে করে।
অনেকে মনে করবে যার যেরকম হওয়ার সে সেরকমই হয়েছে, এখানে কারো কিছু করার নেই; মানুষের চরিত্র আসলে অপরিবর্তনযোগ্য। কথাটা হয়তোবা আংশিকভাবে সত্য। সব ধর্মে আমরা দেখি প্রার্থনায় মানুষের ভাগ্য বদলে যায়। এটা আসলে কি করে হয়? সত্যি কি দোয়া বা প্রার্থনায় মানুষের ভাগ্য বদলায়? প্রার্থনা যদি আন্তরিক হয় তাহলে যে কোন মানুষের জন্য তা কার্যকর, এমনকি ট্যাডিশনাল ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন কারো জন্যও ব্যাপারটা সত্যি। কেউ যদি স্রোতের বিপরীতে চলতে চায় তার মানে এই নয় তাকে সব সময় সারাক্ষণ স্রোতের বিপরীতেই চলতে হবে। আবার কেউ যদি সব সময় স্রোতে গা ভাসায় তার মানে এই নয় তাকে সব সময় স্রোতে গা ভাসিয়ে চলতে হবে। জরুরী যেটা তাহলো এই দুই বিপরীতমুখী চরিত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন। যখন আমরা আমাদের মধ্যে এই বিপরীতমুখী দিক দুটির মধ্যে ভারসাম্য আনতে পারবো তখন আমরা সবকিছুতে ভারসাম্য খুঁজে পাবো। এই ভারসাম্য ফিরে এলে আমরা কিছু মানুষকে খারাপ বলে আখ্যায়িত না করে, তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করবো। বেশীরভাগ মানুষ অন্যকে বদলাতে চায়, আসলে আমাদের প্রার্থনাতে থাকা উচিত নিজেকে বদলানোর মন্ত্র।