Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

ইথিওপিয়ার এক কালো সুন্দরীর সাথে পরিচয়। ওর সাথে আলাপ হচ্ছিলো একদিন, কভিডের সময় পার্কে পরিচয়। জার্মানির ছোট্ট এক শহরে থাকি তখন। ও পেশায় মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলো। এক জার্মানি ভদ্রলোককে বিয়ে করে কয়েকটা দেশ ঘুরে শেষমেশ জার্মানি এসেছিলো ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য। ভদ্রমহিলার প্রতিদিনের রুটিন হলো দৌড়ানো, মাঝেমাঝে সে বক্সিংও করে সেখানকার কোন এক জিমে গিয়ে। ওর বাসায় দাওয়াত করেছিলো একদিন। আমরা ছোটখাটো পিকনিক করেছিলাম ওর বাগানে। ওর ছেলের সাথে আমার ছেলে খেলতে খেলছিলো যখন তখন ওর বাসার কুকুর আর বেড়াল খেলছিলো আমার সাথে এসে। বিড়ালটা কোলে উঠে গিয়েছিলো একেবারে। আমার ভালোই লাগছিলো , তবে মনে হচ্ছিলো এইসব জামাকাপড় বাসায় গিয়েই ধুয়ে ফেলতে হবে, আর গোছল করতে হবে আবার। আমাদের দেশের গ্রামের কুকুর-বিড়াল বেশ ভদ্র আছে, ওরা এসে কোলে উঠে পড়েনি কখনো, সম্পর্কগুলো ভ্যাঙ্গানো আর খাবার খাওয়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বড়জোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া (খুব বেশী যদি সুন্দর আর পরিষ্কার দেখতে হতো)। ইথিওপিয়ার সেই ভদ্রমহিলার বাড়িতে সবাই আমাদের সাদরে গ্রহণ করেছিলো এটাই ছিলো সুখপ্রদ। মহিলার এক যমজ বোন ছিলো একেবারে ওর মতোই দেখতে। সেও কোন এক বিদেশীকে বিয়ে করে কোথাও আছে। ওর পুরনো ছবি বের করেও দেখিয়েছিলো। সবকিছু বিবেচনা করে মনে হয়ছিলো সে একেবারে মারকাটা সুন্দরীই ছিলো বটে। এখনও মহিলা অনেক কড়াকড়িভাবেই ডায়েট করে। ও বলেছিলো দুপুরের পর ও আর কিছু খায়না। বড়জোর সন্ধ্যার পর একটু পানি কিংবা ওয়াইন পান করে। মহিলার মেয়েটা টিনএজার, মেয়ের ছবিও দেখালো। আমার কথাও জানতে চেয়েছিলো। এক ফাঁকে আমাকে জানিয়েছিলো যে আমি সুন্দর দেখতে। তখন আমি স্বভাবতই বলেছিলাম তিন বোনের মধ্যে আমিই একটু তুলনামুলকভাবে বেশি ফর্সা, কিন্তু বেশিরভাগই বলে যে আমার দুই বোনই বেশী সুন্দর। তখন ও খুব সুন্দর একটা কথা বলেছিলো, তাহলো মানুষের সৌন্দর্য আসলে গায়ের রঙয়ে বা বাহ্যিক রূপে নয়, আসল সৌন্দর্য হলে আত্নার সৌন্দর্য। এরপর আমরা দুজনেই চুপ হয়ে গিয়েছিলাম। আর সেই নীরবতায় কোন রকমের অস্বস্তি ছিলোনা। যেনো আমরা দুজনেই গভীর সত্যটা উপলব্ধি করছিলাম। এর মধ্যে ও এসে ওর নিজের জন্য ওয়াইন ঢেলে নিয়ে আমাকে অফার করেছিলো, আমিও ওর সাথে ওয়াইন নিয়েছিলাম এবং আরও অনেক কথা বলেছিলাম।
আমাদের দেশে কালো আর সাদা নিয়ে মানুষের মনে অনেক বিদ্বেষ আছে, যদিও প্রকৃতপক্ষে দেশে কোন পিওর সাদা বা কালো নেই। কারন একটাই একটু ফর্সা দেখতে হলেই বিয়ের বাজারে দাম বেড়ে যায়। অথচ অনেক শ্যামলা কিংবা কালো বরণ মেয়ে-ছেলে দেখেছি যাদের দেখে চোখের পলক ফেলা যায় না, আবার এমনও অনেক ফর্সা মেয়ে-ছেলে দেখেছি যাদের দেখে চোখে মোটেও ভালো লাগেনি।একেকজনের চোখে সৌন্দর্য হয়তোবা একেকরকম।
মজার ব্যাপার হলো জার্মানীতে এসে এক ভদ্রমহিলার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সে মহিলা জানিয়েছিল যে তার এক ভুতুড়ে কালো বাংলাদেশী ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়েছিলো। লোকটি আবার বিয়ে করেছে এক কচি ফর্সা মেয়েকে। মহিলা জানিয়েছিল সে লোক একদিন এক প্লে-গ্রাউন্ডে তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলো যে, এই চেহারা দিয়ে নায়কই হতে পারবে, আর কিছুই পারবেনা। লোকটির কথা কানে যাওয়ায় অবাক হয়েছিলেন ভদ্রমহিলা। ভদ্রমহিলা জানিয়েছিলো, ‘কি ভেবে লোকটি তার বাচ্চাছেলের প্রতি ওমন বিদ্বেষ্পূর্ণ মন্তব্য করে?’ এরপর কোন এক দাওয়াতে লোকটি তার পিঠে হাত বুলিয়েছিলো অথচ কিনা লোকটির বৌ হিজাব করে। সে লোক নাকি তার বৌকে জার্মান ভাষা পর্যন্ত শেখার সুযোগ দেয় না। যে লোক নিজের বৌকে সারাক্ষণ কড়াকড়ির মধ্যে রাখে সে কিনা হাত দেয় অন্যের বৌয়ের গায়ে, এই কথাটি সেই ভদ্রমহিলা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি, এমন কথা কাকেই বা সে বলে। এইসব কথা সে আমাকে যখন জানিয়েছিলো তখন আমার মনে হয়েছিলো, মানুষের চরিত্র আসলে তাকে কুৎসিত বানিয়ে দেয়। লোকটি কালো বলে নিজেকে ভিকটিম ভাবতে পারে, হয়তোবা অনেক বৈষম্যের শিকারও সে হয়েছে জীবনে, কিন্তু তার যে কুৎসিত চরিত্র এটার জন্য সে কাকে দোষারোপ করবে তা আমার জানা নেই! এ সময় মনে পরে যায় ইথিপিয়ান সেই ভদ্রমহিলার কথা, মানুষের সৌন্দর্য আসলে তার আত্নায়। মনে মনে আমি বলে যাই ঠিক! ঠিক! ঠিক!