Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

love-rebel-fear-peace

প্রেম-দ্রোহ vs শান্তি-ভয়

কবি নজরুল প্রেমের ও দ্রোহের কবি, আমাদের জাতীয় কবি।ব্যক্তিগতভাবে নজরুলের ভক্ত তা বলতে পারিনা, তবে তাঁর গান, কবিতার পাশাপাশি গজল, হামদ-নাত এগুলোর সাথে মোটামুটিভাবে পরিচিত। দ্রোহের বা প্রেমের ব্যাপারে যদি আসি তাহলে খেয়াল করা যায় বাঙ্গালীর জাতিসত্ত্বায় এই বৈশিষ্ট্যগুলো ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। বাঙ্গালীর প্রেমবোধ ভাবে গভীর ও সূক্ষ ; জীবন পথের আঁকেবাঁকে ঘুরেফিরে সেই প্রেমের দরবারেই হাজির হয়ে যায় বাঙ্গালী। আরেকদিকে আছে হার না মানা এক অস্তিত্ব, স্বাধীন অস্তিত্বের বিপরীতে যেকোন শক্তিই হোক না কেনো। পরস্পরবিরোধী এই দুই শক্তির অস্তিত্বে অবাক হতে হয়, এ যেনো প্রেম ও দ্রোহের অবিরাম সংঘর্ষ। একদিকে প্রকাশিত হয় নিরেট গভীর প্রেম আবার তারই বিপরীতে দেখা যায় বিদ্রোহের সুর। তাহলে কোনটা সত্যি? বাংগালীর কোন অস্তিত্ব সত্যি? কেমন যেনো গোলমেলে হয়ে যায় ব্যাপারটা!

এই আপাত বিরোধী ব্যাপারটা বুঝতে হলে প্রেমের বিষয়টা জানা জরুরী। ভালোবাসা যদি তাত্ত্বিক ব্যাপার হয় প্রেম হচ্ছে গিয়ে ব্যবহারিক রুপ। ভালোবাসায় কোন প্রকাশ থাকতে হবে এমন কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই, আর প্রেমের ক্ষেত্রে মৌখিক তো বটেই সেই সাথে আচার, ব্যবহার ও কাজের মধ্য দিয়ে আবেগের প্রকাশটা জরুরী। ভালোবাসতে সবাই পারে, তবে তার পরিপূর্ণ রুপ কেবল প্রেমের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয়। অনেকে প্রেমকে সংকীর্ণ রুপে দেখে, নর-নারীর মধ্যকার পরিণয়ই কেবল প্রেম নয়, মাতৃপ্রেম, দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম ইত্যাদি ইত্যাদি অনেককিছুই হতে পারে। প্রেমের যেখানে বহিঃপ্রকাশ ঘটে সেখানে প্রেমের বিপরীত শক্তিও সমান শক্তি নিয়ে উপস্থিত থাকে। ধরি দেশপ্রেমের জন্য মানুষ দেশের বিরুদ্ধশক্তির বিরুদ্ধে লড়বে, মায়ের সম্মান রক্ষার্থে মানুষ সমাজের অথবা পরিবারের বিরুদ্ধে লড়বে ইত্যাদি ইত্যাদি। বাংগালী জাতিস্তত্বা তাহলে দেখা যাচ্ছে এমন এক অস্তিত্ব যারা তাত্ত্বিক মতবাদের থেকে ব্যবহারিকে সক্রিয়। তা হবেই না বা কেনো?! যে জাতির প্রাকৃতিক সম্পদ হলো গিয়ে মানুষ, দক্ষ শ্রম ও কাজের মধ্য দিয়ে যাদের জীবনধারা পরিচালিত হয়; যে জাতি স্বভাবে একদিকে প্রকৃতির মতোই যেমন সরল ও কোমল আবার অন্যদিকে প্রকৃতির মতোই অনমনীয়, অসহনশীল। বাঙ্গালীর অস্তিত্ব সেদিক দিয়ে প্রাকৃতিক শক্তির সাথে তুলনাযোগ্য। যে প্রকৃতি আমাদের লালন করে, সে প্রকৃতিই যেকোন অনিয়ম নাশে আমাদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। প্রকৃতি আসলে কারো পরোয়া করেনা, সে চলে আপন গতিতে, চর্চা করে কেবল ভারসাম্যের। বাঙ্গালী ও প্রকৃতির রুপ সেই দিক থেকে অবিচ্ছেদ্য, হয়তোবা প্রকৃতির নীবিড় সান্নিধ্যে থাকা এই জাতি প্রকৃতির শুদ্ধ রুপ বয়ে চলে সেই একই গভীর বোধ নিয়ে।

ভয়, শংকা, লোভ, হিংসা, ঘৃণা, ছল-চতুরতা এসবই প্রকৃতি বিরুদ্ধ। অন্যদিকে শান্তি, সহনশীলতা, জয়, কৃতজ্ঞতা ও প্রত্যয় এসবই প্রকৃতির পক্ষের শক্তি। প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন বাংগালী জাতি যখন হতাশা ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে তখন তাদের মধ্যে সব সময় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন স্বৈরাচার সরকারের আমলে সরকার যে পক্ষের হয়ে কাজ করে বাংগালী তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যেমন পাকিস্তান আমলে যখন ধর্মের জাতাকল নিয়ে মানুষের উপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়েছিলো সেই সময় পাকিস্তানি শক্তির বিরুদ্ধে নির্ভীক বাঙ্গালী লড়েছিলো। টক্সিক conservative শক্তির বিরুদ্ধে বাঙ্গালী যেমন লড়েছে, তেমনি টক্সিক liberal শক্তির ঝাণ্ডাধারীর বিরুদ্ধেও লড়েছে। যেমন গত টার্মের আওয়ামীলীগের আমলে বেশীরভাগ বাংগালী নারী হিজাব ও পুরুষেরা দাড়ি-টুপি ধারণ করেছে। এর কারন কি? কারন আর কিছু না, বাংগালীর ব্যক্তিস্বাধীণতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, মৌলবাদ নামে যখন Islamophobia প্রচার করা হয়েছে বাঙ্গালী জাতির সুক্ষ জীবনবোধ তা মেনে নিতে পারেনি। সারা বিশ্বে যেখানে ইসলামকে অপশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা তখন বাঙ্গালী তার বিরুদ্ধে লড়বে সেটাই স্বাভাবিক। ধরা যাক এমন এক ব্যবস্থা যেখানে না থাকবে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, না থাকবে liberalism নামে উস্কানিমূলক মন্তব্য/আচরণ সেখানে বাঙ্গালী দ্রোহের জায়গায় প্রেমকেই বেছে নিবে। যেখানে প্রেম-ভালোবাসার, ন্যায়ের নামে মিথ্যা, ছল- চাতুরি, অন্যায় হবে সেখানে বাংগালী জাতি চুপচাপ বসে থাকবেনা। ইদানিং একটা কথা শুনছি তাহলো বাংলাদেশ নাকি তালেবানের দেশ, জামায়াতের দেশ হতে চলেছে। এইসব কথার মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে ভয় ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ যদি তালেবানের দেশ হয়েও যায়, তাহলেও তা ধুপে টিকবে না। দ্রোহের রুপে আবির্ভূত হবে বাঙ্গালী জাতি। প্রেমে যেমন জোর-জবরদস্তি চলে না, ধর্মের নামে ব্যাক্তি মানুষের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাংগালী মেনে নিবেনা কখনই। কেউ হিজাব পরবে না, কি পরবে? কেউ কপালে টিপ পরবে না, কি পরবে? কেউ ঘরে বসে থাকবে, না কি কর্মক্ষেত্রে যোগ দিবে?, কেউ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে না, কি হবে ? এসবই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এসবে বাধা হবে যখন কোন সরকার, তখন বাংগালী প্রতিবাদ করবেই। হয়তোবা রক্তক্ষয় হবে, হয়তো রাজপথ উত্তাল হবে আবারো, বাঙ্গালী নীরব থাকবেনা কখনোই।

ভয় দেখানো হয়, পাশাপাশি দেখানো হয় লোভ; এভাবেই চলে শাসনের জাতাকল। ব্যক্তিজীবনে প্রতিটি বাঙ্গালীর নিজেদের কাছে প্রশ্ন থাকা জরুরিঃ আমরা কি ভয় কিংবা লোভের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবো নাকি শান্তি ও প্রেমের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করবো?!

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75