Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

লিবারাল দেশ, আমাদের মতো কনসারভেটিভ দেশের নাগরিকদের ধারনা এখানে যা খুশি তাই করা যায়। সত্যি কি তাই? মানুষের যা ইচ্ছে হয় তাই কি করতে পারে?
লিবারাল দেশের লিবারাল স্পিরিটের লিমিটেশন হলো এখানে কেবল পজিটিভিটির চর্চা চলে, যার চর্চা কিনা সারা দুনিয়াতেই হয়। কিন্তু whole picture এ কি থাকার কথা? ভালো-মন্দ (good & bad), আলো-আধাঁর ( light & shadow) সবকিছুই থাকবে। মনে আছে ছেলেবেলার ছবি আঁকার সময়ের ঘটনা, যেখানে একটা প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি আঁকতে হয়েছিলো আমাকে; যেটাতে আলো- ছায়ার ব্যাপারটা ফুটিয়ে তোলা হয়নি। অনেক যত্ন করে একটা ছবি এঁকেছিলাম, কিন্তু ছায়ার কাজ ছিলোনা বলে ছবিগুলো বাতিল হয়ে গিয়েছিলো। এখন যখন ফিরে দেখি তখন বুঝতে পারি কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা আমি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। ছোট্ট অপরিণত মনে একটা আদর্শ জগতের ধারণা থাকে আমাদের মনে, যেখানে সবাই ভালো, সবকিছু ভালো। আস্তে আস্তে বড় হতে হতে আমাদের মাথায় অনেক কিছু ঢুকে যায়, না চাইলেও অনেক ভ্রান্ত ধারণাও ঢুকে যায়। এরপর শুরু হয় দলাদলি। সবাই যার যার দলের হয়ে লড়ে যায়। নিজেরা সবাই ভালো আর অন্যরা সবাই মন্দ। নিজেরা সবাই সেরা আর অন্যরা সবাই নীচু শ্রেণীর। এই পরিবার, দল, গোষ্ঠীর প্রয়োজন আছে, কিন্তু এগুলোই সব না। এর বাইরে আরও কিছু আছে, সবাই সেই বড় পরিসরের চিত্র(big picture) অবলোকন করতে পারেনা। আমরা বয়সে বাড়ি, কিন্তু মনের দিক দিয়ে রয়ে যাই অপরিণত; আর বেশীরভাগই রয়ে যায় অপরিণত, পরিণত মানুষেরা সব সময়ই থাকে সংখ্যার দিক দিয়ে নগণ্য; অপরিণতদের সমাজে তাদেরকে সব সময় বাতিলের খাতায় ধরে নেয়া হয়। অনেক সময় মনের দিক দিয়ে যারা পরিণত তারা সমাজের গতাণুগতিক ধারায় নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারেনা, তারা সামাজিক নিয়মগুলো অন্ধভাবে মেনে নিতে পারেনা, তারা প্রশ্ন করে, নিয়ম ভাঙতে চায়, সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে, আশেপাশের মানুষের মধ্যকার দ্বান্দ্বিক চিন্তা-ভাবণাগুলোতে নাড়া দেয়। এই ধরণের মানুষদেরকে সবাই তাই এড়িয়ে যেতে চায়। কারন মানুষ কেবল শান্তিপূর্ণ সমাজ চায় কিন্তু সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করতে চায় না, কারন সমস্যা নিয়ে কাজ করা এতো সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। বরঞ্চ সমস্যা গুলো লুকিয়ে রেখে সবকিছু ঠিকঠাক আছে সেরকম ভাণ করাটা সহজ।
যাই হোক কথা হচ্ছে লিবারাল দেশের এক ভদ্রলোককে নিয়ে। ভদ্রলোক young নয়, আবার তাকে বয়স্কও বলা চলে না। অনেকটা টিনেজার phase এর মতো তার অবস্থা। ভদ্রলোক একাকী, ভালো পিয়ানো বাজায়, কয়েকটা ভাষা রপ্ত করেছে, নতুন আরেকটি ভাষা শিখছে, মুভি দেখতে পছন্দ করে, রুচিশীল, পরিমার্জিত ব্যক্তিত্ব। মেয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই (লিবারাল দেশে ছেলে মেয়েরা বড় হলে আলাদা হয়ে যাবে নিজের পথ খুঁজে নিয়ে এটাই স্বাভাবিক, মা-বাবা সেক্ষেত্রে যতটুকু সাহায্য করার তার সবটাই করে, বিনিময়ে কোনকিছু প্রত্যাশা না রেখেই)। ভদ্রলোকের মেয়ে এখনও কোন বাচ্চা কাচ্চা নেয়ার চিন্তা ভাবনা করছেনা। ভদ্রলোক চাইলে একজন সেক্স পার্টনার খুঁজে নিতেই পারে, কিন্তু রুচিশীল ব্যাক্তিত্বে সেটা যায় না। সেই ভদ্রলোকের মাথায় অনেক চিন্তা কাজ করে- দিনদিন বুড়িয়ে যাচ্ছে , যতদিন চলতে ফিরতে পারবে নিজের বাড়িতেই থেকে যাবে, একেবারে অচল হয়ে গেলে হয়তো কোন বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেবে। মাঝেমাঝে তার মাথায় পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে, একাকী জীবনে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন সে অনুভব করে। শারীরিক চাহিদাও মাঝেমধ্যে জেগে উঠে হয়তো। কিন্তু এই বয়সে তাকে ভালোবাসবে কেউ সেটাও সে বিশ্বাস করতে পারেনা। কারন প্রেম ভালোবাসার নামে কত স্ক্যাম ঘটে যায় আশেপাশে। বিয়ে করবে এই বয়সে সেটাও চিন্তা করা যায় না কারন বিয়ে মানে তো পুরোপুরি একটা commited relationship, অনেক নিয়ম-কানুন, দায়-দায়িত্ব আছে, এই বয়সে সেরকম ভাবনা আসলে সে সাথেসাথে সেগুলো নাকচ করে দেয়। মনের দিক দিয়ে রোমান্টিক ভদ্রলোককে রোমান্টিক ভাবনারা সব আচ্ছন্ন করে রাখে। সমাজ সংসারে সে যেনো বাধ্য হয়ে ফিরে আসে, কিন্তু এক ধরনের নেশা ধরানো নিষিদ্ধ প্রেম তাকে তাড়া ফিরে। লিবারাল দেশ, অনেক option আছে, কিন্তু কোন option ই লোকটির প্রেমিক মনকে তৃপ্ত করতে পারছে না।
এক্ষেত্রে লোকটির সংশয়, ভয়, লজ্জা, অনিশ্চয়তা, উদ্যমের অভাব তাকে তার নিজের জালে বন্দী করেছে। কেউ কেউ এরকম দ্বিধা-দ্বন্দ্বময় সময়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে নিতে পারে, আর বেশীরভাগই হারিয়ে যায় মনের গভীর কামনা ও সংশয় নিয়ে। এখানে মজার ব্যাপার হলো ভদ্রলোকটি কাউকে তার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী করতে পারছে না, কাউকে দোষারোপ করেও শান্তি খুঁজে নিতে পারছে না; আবার এমন কেউ নেই যে তাকে বুঝলেও তাকে কোন রকমের সাহায্য করতে পারবে যদি না সে নিজ থেকে চায়। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশে এরকম পরিস্থিতিতে আশেপাশের মানুষ উদ্যাগ নিয়ে কিছু একটা এরেঞ্জ করে দেয়।
রুমির মতে, “True freedom comes to those who have escaped the questions of free will and fate.”