Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

প্রোডাক্টিভিটি না ক্রিয়েটিভিটি?!

একেকজনের সৃজনশীলতা একেক রকমের। কেউ হয়তো ভালো গাইতে পারে, কেউ হয়তো ভালো নাচতে জানে, কেউ হয়তো ভালো রান্না করতে পারে। ক্যারিয়ার কিংবা পেশার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শখ। মূল কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে মানুষ কিভাবে তার সময় কাটায় তা দিয়ে একজন মানুষকে বিচার করা যায়। কারো হয়তো বাগান করা শখ, কারো হয়তো বই পড়ার শখ আবার কারো হয়তো মানুষের সাথে আড্ডা দেয়ার শখ। মানুষের স্বভাবের পরিপূর্ণ প্রকাশ হয় তার শখের মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশে মহিলারা এক সময় অবসর সময়ে হাতের কাজ করতো শখের বশে, কেউ সেলাই করতো কাঁথা, কেউ বা পরনের কাপড় কিংবা গৃহস্থালি সামগ্রী। এই যুগে সবাই জব করে কিংবা জব খোঁজে, তাদের শখের কাজের সময় কই? এখন মানুষের শখের জায়গায় চলে এসেছে মুভি/টিভি সিরিয়াল দেখা, শপিং করা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া কিংবা আড্ডা দেয়া। যাদের নিজেদের কোন শখের কাজ নেই, শখের জিনিস নেই তারা অন্যদের শখের মূল্য দিতেও জানেনা।

শখ থাকা কেনো প্রয়োজন? শখের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের প্রকৃত স্বত্ত্বার প্রকাশের সুযোগ পাই। কেউ হয়তো কবিতা আবৃত্তি করে আনন্দ পায়, কেউ হয়তোবা লিখে। একেকজনের ভালোবাসার জায়গা একেক জায়গায়। কেউ যদি নিজের আনন্দের জায়গা খুঁজে না পায়, কেবল প্রয়োজনীয় কাজে ব্যাস্ত থাকে তাহলে তা তার মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

উদাহরণস্বরুপঃ খুব সম্ভবত ব্রিটেনের এক স্কুলে এক স্কুল ছাত্রীর নামে তার অভিভাবকের কাছে নালিশ যায় যে, সে ক্লাশে একদমই মনোযোগী নয়। এই নিয়ে সেই মেয়ের অভিভাবক চিন্তায় পড়ে যায়, বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অবশেষে এক সাইকোথেরাপিস্ট এর কাছে যায়। যে সাইকোথেরাপিস্টের কাছে তারা যায় সে লোক ছিলেন অভিজ্ঞ। তিনি অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে সেই মেয়েকে অনেক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি অভিভাবককে ডেকে জানায় যে সেই মেয়ের কোন সমস্যাই নেই, সমস্যা হলো গিয়ে স্কুলে। যে মেয়ের নাচের জন্য জন্ম হয়েছে সে মূলধারার স্কুল থেকে কি শিখবে? যে মেয়ে বিরাট নাচিয়ে হবে তার ক্লাশ রুমে মন বসবে কি করে?!

Creative expression গুরুত্বপূর্ণ। ইদানিং কেউ যখন শখের বশে কিছু করে তখন মন্তব্য শোনা যায় সেগুলোর মূল্য কি? এর থেকে অর্থ উপার্জনে আরও বেশী মনোযোগ দেয়ার পরামর্শও শোনা যায়। কেউ যখন কোন কিছু বানায় শখের বশে তখন তাকে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। আমার এক ভাগ্নী শখের বশে ওল বোনে, সে যখন উতসাহ নিয়ে তার কাজ দেখায় তখন আমার মন্তব্য ছিলো বাজারে তো এর থেকে ভালোমানের দামে কম উলে বোনা সোয়েটার, টুপি পাওয়া যায়, তাহলে কেনো সে শুধুশুধু সময় নষ্ট করছে। তার থেকে পড়াশোনায় অধিক মনোযগী হওয়া জরুরী! এরকম পরামর্শ আমি নিজেও দিয়ে এসেছি। এর পেছনের কারন কি? কারন একটাই কারন আমি নিজেও ওরকম উপদেশ ও পরামর্শ শুনে এসেছি, এখন পর্যন্ত শুনে যাচ্ছি। অনেকে অনেক সময় নানাভাবে বাস্তবতা বোঝাতে আসে, ভয় দেখায় ভবিষ্যতে যদি নিজের কোন আয় উপার্যনের উপায় না থাকে, তাহলে কি হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।কেউ হয়তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসে উপদেশ দেয়, কেউ হয়তোবা নিজের লেজ কেটেছে বলে আমার নিজের লেজ কেনো কাটা যাচ্ছেনা এই নিয়ে মনোপীড়ায় ভুগে বলছে। কিংবা কেউ হয়তো নিজে একইরকম জাজমেন্ট ফেইস করেছে কোন পেশা বেছে না নেয়ার আগ পর্যন্ত এরকম অনেক কারন থাকতে পারে। উদ্দেশ্য যাই হোক, এখন মানুষের শকের কিছু নেই বলে, কেবল প্রয়োজনের খাতিরে করে যায় বলে মনে সুখ নেই। এখন মানুষ ব্যাস্ত থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু শখ নিয়ে ব্যাস্ত খুব কম মানুষই থাকে। প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে সবাই ব্যাস্ত যখন, তখন ক্রিয়েটিভিটির জায়গা কমে গিয়েছে।

ইদানিং মানুষজনকে দেখা যায় ধর্মীয় আচারে অনেক ব্যাস্ত, সেখানেও প্রোডাক্টিভিটিতে প্রতিযোগিতা। মানসিক প্রশান্তি লাভ, সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ কতটুকু হলো সেখানে মানুষের আগ্রহ কম, মানুষ এখানেও প্রোডাক্টিভি দেখে। কে কতবার কোরআন খতম দিলো, কে কত ওয়াক্ত নামাজ পড়লো, কে কয়টা/কত বেশী রোজা রাখলো এই নিয়েই মানুষজন প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। অথচ তারা নবীজী (সাঃ) পথ দেখতে পায় না, তারা কেবল অন্ধের মতো অনুসরণ করে যায়। নবীজী (সাঃ) কয়টা খেজুর খেয়েছেন, খাওয়ার আগে কি দোয়া পড়েছেন এইসব নিয়ে ব্যাস্ত, অথচ নবীজী (সাঃ) দীর্ঘসময় ধ্যানমগ্ন হয়ে কি করে নবুয়্যত লাভ করলেন, কিভাবে চারিত্রিক উতকর্ষতা অর্জন করলেন, কিভাবে সাংসারিক জীবন পরিত্যাগ না করেও পার্থিব মোহ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেন সেসব আর দেখেনা। এজন্য রাবেয়া বস্রী হয়তো বলেছিলেন: “O God! if I worship Thee in fear of Hell, burn me in Hell; and if I worship Thee in hope of Paradise, exclude me from Paradise; but if I worship Thee for Thine own sake, withhold not thine everlasting beauty.”


tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75