Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

আমিই ফেরাউন, আমিই নবী

ফেরাউন স্বপ্ন দেখেছিলেন বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ে এমন একজনের জন্ম হবে যেকিনা সাম্রাজ্যের পতনের কারন হয়ে দাড়াঁবে। এখানে বলে রাখা ভালো, সে সময় ফেরাউন বলতে সে সময়কার সরকার প্রধানকে বোঝানো হতো, কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তিকে নয়। মূসার জন্মকালে মিশর সাম্রাজ্য ছিলো সম্মৃদ্ধির শিখরে। আমরা জানি যেকোন সভ্যতার উত্থান আছে, আবার পতনও আছে। হয়তো মিশর সাম্রাজ্যের পতনকাল ঘনিয়ে এসেছিলো, গল্পের প্রয়োজনে মূসার আবির্ভাবের মধ্যদিয়ে ফেরাউনের পতন হয়েছিলো।

এখানে একটা বিষয় আমাদের সাধারনের বোধের বাইরে থেকে যাবে, তা হলো ফেরাউন স্বপ্নটা এতো বেশী সিরিয়াসলি নিয়ে ফেললো কেনো? সব স্বপ্ন তো সত্য হয়না! আসলে প্রাচীন কালে মানুষের চেতন ও অবচেতন (conscious & subconscious) মনের সংযোগটা ছিলো নিবিড়, মানুষ তার অবচেতন মনে যা ঘটে যেতো সেগুলোর প্রতিফলন পেতো চেতন মনে, আবার চেতন জগতে যাকিছু ঘটতো অবচেতন মনে সেগুলোর সূক্ষাতিসূক্ষ বিশ্লেষণ হতো যার ফলে চেতন মনে ব্যাক্তি যেগুলো উপেক্ষা করে যেতো অবচেতন মন সে সম্পর্কে ব্যাক্তিকে অবগত করে দিতো নানাভাবে উদাহরনস্বরুপঃ স্বপ্ন হলো এমনই এক মাধ্যম। অবশ্য আরেকটা বড় কারন ছিলো আগেকার সময়ে মানুষের মন আধুনিক এই সময়ের মতো এতো কিছুতে বিক্ষিপ্ত ছিলো না, যার ফলে তাদের অন্তর ও বাহিরের অভিজ্ঞতায় তারা সবকিছুর কার্যকারন খুঁজে পেতো। বাস্তব জীবনে চেতন অবস্থায় মন যা ঠাহর করে উঠতে পারেনা, অবচেতন মন সে ব্যাপারে মনকে অবগত করতে চায়। ফেরাউনকেও তার অবচেতন মন স্বপ্নের মাধ্যমে তাকে অবগত করতে চেয়েছিলো। এখানে আরেকটি খুব শক্তিশালী ব্যাপার হলো, চেতন অবস্থায় ফেরাউন কিভাবে বিষয়টি নিয়েছিলো। পতনের ভয়ে তাড়িত ফেরাউন যদি বনী ঈস্রাইল সম্প্রদায়ের উপর অন্যায় ও জুলুম না চালাতো তাহলে হয়তোবা মুসা নবীর উত্থানই হতো না। মজার ব্যাপার হলো মুসা নবী বেড়ে উঠেছিলো ফেরাউনের সান্নিধ্যে থেকে। ফেরাউনের ছায়াতলেই বেড়ে উঠেছিলো তার শত্রু, যে শত্রুর ভয়ে সে ভীত, তাড়িত। যে ভয়ের তাড়নায় কত শত শিশু হত্যা করেছিলো ফেরাউন। যে মুসা নবীর মাধ্যমে জালিম ফেরাউনের পতন হয়ে পৃথিবীতে এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিলো, সে নবীর অনুসারী বলে যারা দাবি করে তারাই আজকের পৃথিবীর জালিম। মানুষ যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতো তাহলে হয়তোবা একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতো না, কিন্তু তেমনটি হয়তোবা হওয়ার নয়। এ যেনো মানব জাতির উপর সৃষ্টিকর্তার পরীক্ষা স্বরুপ। মুসা নবীর অনুসারীদের কাছে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, জালিমের পরিণতি কি। এতো স্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বিগত ইতিহাসে যে অত্যাচারীত সেই আবির্ভূত হয় অত্যাচারী রুপে। শুরু থেকেই সৃষ্টির লীলাখেলা এভাবেই চলছে। আজকের যারা অত্যাচারীত মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষমতায় এসে তারাই যে এক সময় অত্যাচারী রুপে প্রতীয়মান হবে সে গ্যারান্টি আমরা কেউই দিতে পারিনা। গল্পের ন্যারেটিভ আমরা আমাদের মতো করে বিবরণ করি যদিও, কিন্তু দেখা যায় একই গল্পে সময়ের আবর্তে আমরাই ফেরাউন আবার আমরাই মুসা বনে যাই।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75