Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

পাতিহাঁসে-রাজহাঁসে বন্ধুত্ব

রাজহাঁসের গল্পের আসরঃ

এক দেশে ছিলো এক পাতিহাঁস ও রাজহাঁস। পাতিহাঁসের ছিলো তিনটা ছানা, আর রাজহাঁসের ছিলো দুইটা ছানা। দুই হাঁসের মধ্যে বেশ খাতির জমে গেছে, কারন কাছে কুলে তেমন কোন আমুদে হাঁস পরিবার দেখতে পাওয়া যায় না। সারাদিনের কাজ শেষে কিংবা অবসর সময়ে দুই হাঁস ও তার পরিবার মিলে আড্ডা দেয়- হাসি-আনন্দে সময় বেশ কেটে যায়। হাঁসেদের ছানারাও মনের সুখে হাসে আর খেলে।

মজার ব্যাপার হলো পাতিহাঁসের বরটা একটা রাজহাঁস। পাতিহাঁস হয়ে রাজহাঁসের সাথে সংসার করা সহজ ব্যাপার নয়। রাজহাঁস পাতিহাঁসকে কথায় কথায় ঠাট্টা তামাশা করে আকারে পাতিহাঁস ছোট বলে। পাতিহাঁস আকারে ছোট হতে পারে কিন্তু কোন অংশে অন্য কোন হাঁসের থেকে কম নয়। পাতিহাঁস বান্ধবীটি কাজে-কর্মে, বিচার-বুদ্ধিতে শুধু পাতিহাঁস জগতে নয় বলতে গেলে হাঁসেদের জগতে সুনাম রাখে, খালি এই হার-হাভাতে রাজহাঁস পরিবারে এসেই তার এইসব ঠাট্টা-তামাশা সহ্য করতে হয়। পাতিহাঁস বান্ধবী অন্য সব পাতিহাঁসকে দেখানোর জন্য হোক, রাজহাঁসকে ভালোবেসে হোক কিংবা নিতান্ত জেদের বসেই হোক রাজহাঁসকে ছেড়ে যায় না, কিন্তু তার মনের কোনে ক্ষোভ জমে থাকে তারই অজান্তে।

রাজহাঁস হয়ে পাতিহাঁসের সাথে সখ্যতা নিশ্চয়ই রাজহাঁস বান্ধবীটা গবেট টাই এই ভেবে পাতিহাঁস মনে মনে রাজহাঁসকে অবজ্ঞা করে। একদিন হয়েছে কি পাতিহাঁস কৌশলে রাজহাঁস বান্ধবীর ছেলেটাকে বুঝিয়ে দিয়েছে রাজহাঁস হলে কি হবে ও তো লুজার আর বিপরীতে পাতিহাঁসের ছেলে উইনার। রাজহাঁসের ছেলে মার কাছে এসে এই নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করে তখন রাজহাঁসের মা ছেলেকে বোঝায় কিন্তু সব আঁচ করতে পারে। রাজহাঁস ভাবে পাতিহাঁসের মনে অনেক কষ্ট- তাকে সব সময় প্রমাণ করতে হয় যে, সে কোন অংশে কারো থেকে কম না, যা কিনা সত্যি ক্লান্তিকর। অনেক চেষ্টা করেও সে যে উইনার তা সে অনুভব করতে পারেনা(মিডিয়ায় যত চেহারা বা তারকা সবখানেই তো রাজহাঁসদের জয়গান গাওয়া হয়), তাই সে অন্যদেরকে লুজার প্রমাণ করতে চায়। পাতিহাঁস খামোখাই জীবনটাকে সিরিয়াস গেইম হিসেবে নিয়েছে যেখানে হার-জিতটাই যেনো সব, এর বাইরে কোন স্বস্তির বা শান্তির জায়গা নেই। মিডিয়ার কল্যাণে হোক বা অভিশাপে হোক সাধারণ রাজহাঁসদের জীবন-যাপন দুরূহ হয়ে পড়েছে (যারা সহজ স্বাভাবিকভাবে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায়), অযথাই অন্যদের আক্রোশ কিংবা হিংসার শিকার হতে হয় ।

আরেকদিন রাজহাঁস খেয়াল করলো হুট করে পাতিহাঁস তার ছেলেটার পিছে লেগেছে। সে ওকে বেশ কড়াভাবেই অনেকটা ধমকের সুরে বলছেঃ “তুমি এতো লম্বা কেনো?” পাতিহাঁসের এই কথায় রাজহাঁস মিটিমিটি হাসতে থাকে। সে ঠিকি পাতিহাঁসের আসংলগ্ন ব্যবহার খেয়াল করেছে কিন্তু কিচ্ছু হয়নি এমনভাবেই সে ঘটনাস্থলে উপস্থিত। রাজহাঁস খেয়াল করে দেখেছে তার ছেলের উত্তরও বেশ ইন্টারেস্টিং। রাজহাঁসের ছেলে বেশ সাবলীভাবেই একটু চিন্তা করে উত্তর দিলোঃ “জানিনা তো!” এই কথা শুনে রাজহাঁস আর পাতিহাঁস দুজনেই হাসলো। রাজহাঁস মনে মনে ভাবছে পাতিহাঁস বেচারার তো সারাক্ষণ এইসব শুনতে হয়। তার নিশ্চয়ই এইসব কথা শুনতে শুনতে অসহ্য লাগে, তাই বেচারি ছোট্ট বাচ্চার উপরই তার সমস্ত ক্ষোভ ঝাড়তে চায় যেনো। রাজহাঁস এইসব অনেক ছোটখাটো বিষয় খেয়াল করে, তারপর আস্তে আস্তে বুঝে যে পাতিহাঁস নিজেকে ভালবাসতে শিখেনি, যে পাতিহাঁস নিজেকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে শেখেনি সে কি করে অন্যকে গ্রহণ করবে বা ভালবাসবে-তার কাজই তো হবে অন্যদেরকে আঘাত করা কিংবা অন্যরা যাতে তার মতোই নিজেকে ঘৃণা করতে শেখে সে চেষ্টা করা। যে নিজেকে ভালোবাসে সে কখনো অন্যদের মতো হতে চাইবেনা কিংবা অন্যরা তার মতো নয় বলে তাদের প্রতি হিংসাত্নক আচরণ করবেনা- যে যেমন তাকে সেভাবেই গ্রহণ করবে।

পাতিহাঁস আর রাজহাঁসের বন্ধুত্ব সেই আগের মতোই আছে- কারন রাজহাঁস পাতিহাঁসকে যেমন বুঝে, পাতিহাঁসও তেমনি রাজহাঁসকে বুঝতে চেষ্টা করে। আর রাজহাঁস ভালো করেই জানে ভালো-মন্দ সবকিছুর মুখোমুখি হয়েই ছানা-পোনারা বড় হবে। আলো-আঁধারির জগতে কেবল আলোটাই দেখবে, কোন ছায়া দেখবেনা; তা তো হবেনা। রাজহাঁসের মধ্যেও যে কোন মন্দ দিক নেই তা তো না, কোন পাতিহাঁসের বলা গল্পে সেটা ঠিক বের হয়ে আসবে।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75