Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

আবার সেই সামাজিক নৈকট্য চলে আসুক, আবার সেই বিশ্বাস ফিরে আসুক, আবার সেই ভারসাম্য বিরাজ করুক।

এক সময় এমন ছিলো যেখানে পরিবারের লোকজন কাছাকাছি থাকতো। আমরা বেড়ে ওঠার সময় আশেপাশে মামা-চাচা-খালারা ও ছিলেন। কাজিনদের পাশাপাশি অন্যান্য দূরবর্তী আত্নীয়-স্বজনের সাথে ওঠাবসা ছিলো, যোগাযোগ ছিলো। বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করতো। এছাড়াও ছিলো পাড়াপ্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধব। সামাজিক যোগাযোগটা ছিলোও জোরালো। কোন একটা টিভি প্রোগ্রাম দেখলেও সবাই মিলেই দেখতাম, এছাড়া সিনেমা হলে কিংবা ডিভিডি ভাড়া করে সিনেমা দেখাও ছিলো গ্রুপ একটিভিটি। মনে আছে গ্রামের বাড়িতে দাদা কিংবা নানা বাড়িতে জোট বেধে আমরা সবাই যেতাম, সে সময় সারা বাড়ি গমগম করতো। ভেতর ও বাইরের বাড়ির আঙ্গিনায় আমরা দলবেঁধে বসতাম। দাদাবাড়িতে বসতো গল্পের আসর, আসরের মধ্যমণি হয়ে থাকতেন একেক সময় একেক কাকা। দাদা বাড়ি ছিলো নির্ভয়ারন্যঃ দরজাজানালা সব হাটখোলা করে সবাই ঘুমিয়ে যেতো, কোন চোর-ডাকাতের ভয় কারো মনে ছিলো না। জানালায় ছিলোনা কোন শিক, বাড়ির চারপাশে ছিলো না কোন বেড়া। নানা বাড়িতেও চলতো গালগল্প, ভাইবোনদের মধ্যে খুনসুটি। নানা বাড়ির চারপাশে ছিলো উঁচু উঁচু বেড়া, ঘুমানোর সময় সব গুছিয়ে, দরজাজানালা ভালো করে বন্ধ করে তারপর সবাই ঘুমাতো, সে হিসেবে নানা বাড়ি বেশ আধুনিক, গেইট ওয়ালা বাড়ি ছিলোনা, তবে জানালায় শিক ছিলো।

মজার ব্যাপার হলো দাদা বাড়িতে সব সময় এক ধরনের অনুভূতি কাজ করতো, নানাবাড়িতে অন্য রকমের অনুভূতি। দাদাবাড়িতে আমরা দলবেঁধে মোড়ের দোকানে গিয়ে চা খেয়ে আসতাম।চাচা-চাচী, ভাই-বোনেরা মিলে দলবেঁধে, নানাবাড়িতে ওরকম কল্পনাও করা যেতোনা, দরকার পড়লে দোকান থেকে ফ্লাস্কে চা আসবে, কিংবা আইস্ক্রিমওয়ালারা ভ্যান নিয়ে আসবে। আরেকটা জিনিস খেয়াল করার মতো তা হলো দাদা বাড়িতে সেই সময় আমাদের বাড়ির গাছের কোন ফল পাকড় পাড়া প্রতিবেশীরাও পেড়ে নিয়ে যেতো কারো কোন রকমের অনুমুতি ছাড়াই। অন্যদিকে নানা বাড়িতে গাছ থেকে আম পড়লে আমার নানী কান খাড়া করে রাখতো, আশেপাশের কেউ কুড়িয়ে নিয়ে গেলে নানী বকুনি শুরু করে দিতো। এরও আগে মা-বাবার মুখে শোনা গল্প যে তাদের শৈশবকালে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই সবার গাছ থেকে ফল-ফলাদি পেড়ে খেতো, সে সময় কার গাছ কোনটা এইটার হিসাব বলতে গেলে কেউ রাখতো না। নানাবাড়ি আর দাদাবাড়ির মধ্যে এই যে পার্থক্য এরকম আরো ছোটাখাটো অনেক কিছুই ছিলো, তখন বুঝতাম না লিবারাল বা কনজারভেটিভ কি জিনিস। এখন যখন বুঝি তখন ভাবি আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে।

একটা প্রবাদ শুনে শুনে বড় হয়েছি তাহলোঃ ‘বনের বাঘে খায় না, মনে বাঘে খায়’- কথাটা মিথ্যা না। মানুষের চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন হয় তার প্রতিদিনের দিন যাপনে। কেউ যদি তার চারপাশের সবার সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে চলে, তাহলে তো তার ভয়ের কোন কারণ নেই। আর কেউ যদি চারপাশের সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তাহলে তার সব সময় ভয়ের জগতে বাস করতে হবে।

একদিকে যেমন ধনী-গরীবের বৈষম্য অন্যদিকে সংযোগ বিচ্ছিন্নতা দুটোই সামাজিক কাঠামোর জন্য হুমকি স্বরূপ। আমরা ছোটবেলায় অনেক বান্ধবীর বাসায় যেতাম কিন্তু ওইসব বান্ধবীর আবার আমাদের বাসায় আসার সময় কিংবা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে নানান বাহানা ছিলো। এর মূল কারণ তখন বুঝতাম না; এখন বুঝি। ঐসব পরিবার তাদের ঘরের মেয়ে-বউদের ব্যাপারে খুবই প্রটেকটিভ। তারা কাউকে বিশ্বাস করেনা, এমনকি মনে হয় তারা তাদের মেয়ে কিংবা বউ কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেনা কারন মেয়ে-বউও তো ভুল করতে পারে। সোজা কোথায় বলা চলে insecurity তে ভোগে তারা সব সময়। ভয়ের জগতে এদের বসবাস। কিছু শক্তি আছে তারা চায় মানুষ ভয়ে বাঁচুক, সেরকম পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে তাদের জন্য নিয়ন্ত্রণ করাটা সহজ হয়ে যায়। মানুষ যখন ভয় পায়, অসহায় হয়ে পড়ে তখন সে খোঁজে পরিত্রাণকর্তা (saviour)। কিন্তু মানুষের পরিত্রাতা সে নিজেই। সে নিজে যখন কোন কিছু নিয়ে অপরাধবোধ কিংবা অনুশোচনায় ভুগবে না, অন্যদেরকেও মন্দ প্রমাণের চেষ্টা করবেনা কিংবা ভয় পাবেনা তখন তাকে posses বা manipulate বা control করা অতটা সহজ নয়। রুমির কথা চলে আসে স্বভাবতইঃ “Those who are at war with others are not at peace with themselves.” 

নিজের শান্তি খুঁজে পেলে মানুষ অন্যদের অশান্তির কারন হয় না। আবারও রুমি চলে আসেঃ “When you find peace within yourself, you become the kind of person who can live at peace with others”.

আবার সেই সামাজিক নৈকট্য চলে আসুক, আবার সেই বিশ্বাস ফিরে আসুক, আবার সেই ভারসাম্য বিরাজ করুক।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75