Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

love yourself

বোঝেনা সে বোঝেনা!

মা বাসায় এসেছে গরমে হেঁটে পরিশ্রান্ত হয়ে। ঢুকেই এক গ্লাস পানি চাইলো আমার কাছে। আমিও দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে মাকে দিলাম। পানি মুখে দিয়েই মা হতাশ গলায় বলে উঠলো, এরকম গরমে মানুষ গরম পানি খায়? আমি নিজের ভুল বুঝতে পারলাম না। বললাম পানি চাইছো, পানি দিলাম তুমি তাও খুশি না ক্যান। তখন সে বলে গরম থেকে এসে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি পাওয়ারও জো নাই। আমি মোটামুটি অতৃপ্তি নিয়েই সেখান থেকে প্রস্থান করলাম।

আমার মায়ের স্পেসিফিক চাহিদা ছিলো। এগজ্যাক্ট সেই চাহিদাগুলো না মিটলে সে হতাশায় ফেটে পড়তো। তাকে দেখে দেখে আমি চাইতাম জীবনে যা পাই, যেমন পাই তাই নিয়ে যেনো খুশি থাকতে পারি। সুখ ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক, মাকে দেখে বুঝতাম। যেমনঃ মানুষ যখন সে যা শুনতে চাইতো তা বলতো তখন তার চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করে উঠতো, আবার পরক্ষণই দেখতাম তার চোখমুখ অন্ধকার, কালো হয়ে আছে। বয়সের সাথে সাথে বুঝতে পারলাম মার সামনে এমন কিছু বলা যাবেনা যা সে পছন্দ করেনা। আস্তে আস্তে আরও খেয়াল করলাম আশেপাশের মানুষও তাকে এই আসমানে তুলছে, আবার সেই অতল পাতালে নামিয়ে দিচ্ছে। বোধে আসলো মানুষেরা বেশ মজা নিয়েই এই খেলা গুলো খেলে, আর আমার বোকা মা তাদের সেই খেলার বস্তু। মার জন্য কষ্ট লাগতো, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আফসোস হতো যে কেনো সে অমন বোকা। সে তো কোন গোবেচারা মহিলা না, সে তো স্বাবলম্বী একজন মহিলা। এখন বুঝি কারওটা সে খায়নি-পড়েনি; কারও সে ধারও ধারেনি তারপরও তার সুখ-দুঃখের লাগামখানা সে অন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলো। এজন্যই হয়তো রুমির মতে-

“Half of life is lost in charming others.
The other half is lost in going through anxieties caused by others.
Leave this play. You have played enough.”― Rumi

এইসব দেখে বড় হওয়ার কারনেই কিনা জানিনা, অনেকটা ঠোঁটকাটা স্বভাবের হয়েছি হয়তো। মানুষ কি শুনতে চায় তা আঁচ করতে পারলে, তার বিপরীত কিছু একটা বলে ফেলি! যা বলি তা যে সব সময় খুব mean করি তা নয়, তবে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যায় অনেক কিছু। মার ঠাণ্ডা পানির হতাশার কথা মনে পড়ে যখন তখন মনে হয় আমার মা কত সেনসিটিভ, সে সবার কত খেয়াল রাখতো। সারাক্ষণ কত তৎপর থাকতো যাতে কোথাও কোন ভুল না হয়। বিপরীতে অন্যরা তার কি পছন্দ-অপছন্দ সেগুলোর কোন খবরই রাখতো না। আর আমি কতটা ইন্সেন্সিটিভ তারই মেয়ে হয়ে। হয়তো মাকে দেখে মনে মনে কম সেনসিটিভ হওয়ার বাসনা ছিলো অবচেতনে। মাকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দিতে না পারার ব্যাপারটা যখন মাথায় আসে তখন মনে হয় আমাদের প্রজম্নটাই কি ওমন যারা বুঝেনা এইসব ছোট ছোট ব্যাপারগুলো, নাকি বুঝেও বুঝেনা আমারই মতো।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75