Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

to be whole again

টু বি হোল এগেইন (to be whole again)

‘Grave of The Fireflies’ মুভি দেখার সময় মনে পড়ে অনেক কান্না করেছিলাম। গল্পটা ছিলো এক ভাই ও তার বোনকে নিয়ে- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিরকম হৃদয় বিদারক বাস্তবতার সম্মুক্ষীণ হয়েছিলো তারা। ভাইয়ের অসহায়ত্ব যতটুকু অনুভব করেছি তার বিস্তৃত বিবরণ ভাষায় তুলে ধরা সম্ভব নয়। স্বচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা দুই ভাই-বোনের যুদ্ধপরবর্তীকালে একাকী বেঁচে থাকার সংগ্রাম যে কোন মানুষের হৃদয় নাড়িয়ে দিবে।

এই মুভিতে এক জায়গায় দেখা যায় দুই ভাই-বোন এক আত্নীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, যুদ্ধকালীন সংকটে যেখানে এরা দুজন ছিলো নিতান্তই অনাহুত। খাওয়ার সময় ওদের পাতে খাবার দিতে সেই আত্নীয়ার সহানুভূতিহীনতা ও কার্পণ্য লক্ষ করা যায়; সেই মুহূর্তে ভাইটির অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। মায়ের আদর মাখা খাবারের স্বাদ সে আস্বাদন করে মনে মনে। আত্নীয়ার ভালোবাসাহীন, অবহেলা ও অবজ্ঞাময় আচরণ তাকে ব্যাথিত করে। ছোট্ট বোনটি পর্যন্ত ভাইয়ের মর্মব্যাথা অনুভব করে কষ্ট পায়। ট্রাজেডিময় মুভিতে মনে ভীষণভাবে দাগ কেটে যায়।

একবার সেই ছোট্ট দুই ভাই-বোনের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি, আরেকবার সেই আত্নীয়ার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি! দুই জায়গাতেই নিজের অস্তিত্ব যখন চিন্তা করি কিছুই ভালো লাগেনা আর। আমরা তো কেউ আসলে পারফেক্ট নই। মানুষের স্বভাবই তো ওমনঃ ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’। স্বভাবতই সেই আত্নীয়া তার নিজের পরিবার, নিজের সন্তানকে অগ্রাধিকার দিবে, সে চাইবেই তারা আগে টিকে যাক জীবন সংগ্রামে, অন্যদের টিকে থাকার সংগ্রাম তাকে তাড়িত করেনা। অন্যদিকে অভিভাবকহীন ভাই-বোনের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করি যখন তখন মনে হয় সেই আত্নীয়া যদি ওদেরকে নিজের সন্তানের চোখে দেখতে পারতো তাহলে ওদের ওমন করুণ পরিণতি নাও হতে পারতো। তাই কাউকেই আমরা আসলে জাজ করতে পারিনা, unless আমরা নিজেরা সেই একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাই!

মানুষের তো অনেক সময় অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে থাকে আর মানুষের মাইন্ডসেট যদি এমন থাকে সবাইকে নিয়েই বেঁচে থাকা সম্ভব তাহলে অসম্ভব বলে জগতে হয়তো তেমন কিছু থাকেনা, যদিও আমরা চাইলেও সবাইকেই save করতে পারিনা! তবে মানুষেরা যখন মনে গরীব হয় তখন অন্যদের ক্ষেত্রে উদার হতে পারেনা, সংকীর্ণ মানসিকতাই মানুষের দারিদ্রতার কারন বিজ্ঞজনেরা বলে গেছেন! উদাহরণস্বরুপঃ বেশীরভাগ মানুষ কারো সাথে পরিচয়ের পরপরই তাকে বিশ্লেষণ করতে শুরু করে, যদি প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে করে সে গরীব কিংবা কম বুদ্ধির তাকে সেইভাবেই ট্রিট করে, আর যাদেরকে প্রয়োজনীয়, উপকারী, ধনী ও বুদ্ধিমান বলে মনে করে তাদেরকে অন্যভাবে ট্রিট করে। এই যে evaluation process সেখানে তারা অন্যদের বেলায় যেমন আচরণ করে সেই একই আচরণ অন্যরা তাদের সাথে করলে তারা তা মেনে নিতে পারেনা। তারা চায় তাদের সাথে ভালো আচরণ হোক, যদি তারা ভালো আচরণ না পায় তখন বেশীরভাগ সময়ই তারা অন্যদের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলে বেড়ায়, কিন্তু একই আচরণ যখন তারা অন্যদের সাথে করে তখন তারা সেটাকে জাস্টিফাই করে নানাভাবে। এই যে মানুষের দ্বিমুখী আচরণ সেটা আমাকে ব্যাথিত করে। তাই আমি মোটামুটি চেষ্টা করি সবার সাথে মোটামুটি একই রকম আচরণ করতে! তবে অনেক সময় আমি বরং ধনী যারা, যারা সব সময় তোষামোদ পেয়ে থাকে, এমনকি সব জায়গায় সবার কাছে থেকে তা দাবী করে তাদেরকে এড়িয়ে যেই, কিংবা তাদের দাবী পূরণ করিনা ইচ্ছে করেই। আমি খেয়াল করি মানুষজন আমার সাথে কেবল নয়, অন্যদের সাথে কেমন আচরণ করছে, অন্যদেরকে কিভাবে asses করছে, যখন দেখি তাদের মধ্যে মানুষের সাথে আচরণে কোন integrity নেই তাদেরকে আমি মনে মনে ঘৃণা করি। আগে অনেক সময় এইসব মানুষের সাথে আমি সরাসরি খারাপ ব্যাবহার করতাম, তাদেরকে ডিরেক্টলি বুঝিয়ে দিতাম যে তাদের আমি পছন্দ করিনা, বয়সের সাথে সাথে আস্তে আস্তে নিজেকে পরিবর্তন করেছি। কারন কথায় আছে “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়”। এখন আমি যা করি তাহলোঃ ‘I can set an example before them’.

মানুষের মধ্যে আরেকটা জিনিস খেয়াল করি তাহলো কেউ কেউ পরিচয়ের প্রথমেই তার বংশ গৌরব, পদবী, ডিগ্রি, প্রভাব, প্রতিপত্তি ইত্যাদি তুলে ধরে ইনিয়ে বিনিয়ে সামাজিকভাবে সে যে উচ্চাবস্থানে আছে সেকথা জানান দেয়। নিজের গৌরবগাথা তুলে ধরার কারন কি?! এতোসব শুনে আমার কি লাভ?! কেনো এইসব বিষয় তারা আমাকে জানান দিচ্ছে?! এইসব ব্যাপার বুঝতে আমার সময় লেগেছিলো, কারন ব্যাপারটা আমার কাছে কোনভাবেই স্বাভাবিক আচরণ নয়। এরপর আস্তে আস্তে যেটা বুঝতে পারি, কারন মানুষ সব সময় সে ভয়ই করে যেটা সে অন্যদের সাথে করে থাকে। উদাহরণস্বরুপঃ যে মহিলা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন গরীব বলে তাদের সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করে গিয়েছে কোনরকম অনুশোচনা ছাড়াই সেই মহিলা সব সময় চাইবে তার পুত্রবধু কিংবা ভাইয়ের বউ যেনো তার মেয়ে-ছেলে কিংবা তার ভাই-বোনদের সাথে সেরকম আচরণ করতে না পারে। সে সব সময় ensure করতে চাইবে পুত্রবধু কিংবা ভাইয়ের বউকে সব সময় কড়া পাহারায় রাখতে, যাতে করে তারা তাদের সাথে সেরকম আচরণ করার সু্যোগ না পায়। কারন তার মনে সেই ভয় কাজ করে- যদি সে নিজেও অবজ্ঞার শিকার হয়! যদি তাকেও অন্যরা তুচ্ছজ্ঞান করে! কেউ যখন নিজে অন্যদের সাথে ভালো আচরণ করে তখন সে ভয়ের মধ্যে বসবাস করেনা, অন্যদেরকে সে নির্দিধায় বিশ্বাস করে থাকে।একই রকম ব্যাপার লক্ষ্য করা যায় পুরুষদের মধ্যেও। কোন পুরুষ যদি অন্য মহিলাদের সাথে খারাপ আচরন করে, অন্যায় করে, এবিউসিভ হয় তখন সে সব সময় নিজের মেয়ে,বউ,বোন,মা কে নিয়ে ভয়ের মধ্যে বসবাস করে। কারন সে অন্য কোন পুরুষকে বিশ্বাস করতে পারেনা। সে মনে করে জগতের সকল পুরুষেরাই তার মতো কুচিন্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর তারা তার পরিবারের ক্ষতি সাধন করতে পারে যেকোন সময়। যেজন্য এইসব পুরুষ সব সময় আতংকের মধ্যে বসবাস করে, মেয়ে-বোন-বউকে কড়া পাহারায় রাখে সেই একই ঘটনা prevent করার জন্য।

যা আমরা দেখতে পারি তাহলো, মানুষ আসলে নিজেকেই নিজে ভয় পাচ্ছে। নিজের আচরন, চিন্তা যদি সুস্থ না হয় তখন সে অন্যদেরকে অসুস্থ প্রমাণ করে তাদেরকে শুদ্ধ করার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়। এজন্য মোটামুটি সব ধর্মের মূলকথাই হলো ‘we have to conquer the darkness inside us’। এজন্যই হয়তোবা carl jung এর মতেঃ “If you don’t integrate the Shadow, the Shadow will disintegrate you.” কার্ল ইয়ং এর সূত্রধরে আমরা তাই দেখতে পাই অসংখ্য মানুষ যারা কিনা disintegrated, দুঃখের ব্যাপার হলো এইসব মানুষ নিজেরাই জানেনা অন্যদের শুধরাতে না যেয়ে বরং তাদের উচিত নিজেদেরকেই শুধরানো।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75