Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

blissful

বাহুল্যবর্জিত সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন

আমার বাবার অনেক টাকা ছিলো না। পেশায় ওকালতি করলেও তার অনেক উপার্জন ছিলো না। বলা চলে অনেকটা মায়ের সীমিত উপার্জনেই আমাদের সংসার চলতো; যেজন্য হিসাব করেই আমাদের চলতে হয়েছে সব সময়। বাবা পেশায় উকিল এই ইম্প্রেশনে অনেকেই ধারণা করতো যে আমরা বড়লোকের ছাওয়াল। বড় হতে হতে মানুষের ধারণা ও আচরণ দেখে মনে মনে হাসতাম, কারন জানিতো আমাদের আর্থিক অবস্থা কি! হিসেবের বাইরে খরচ করার উপায় ছিলোনা। মায়ের কাছে আলাদাভাবে কিছু আবদার করতেও খারাপ লাগতো। সে সময় মনে হতো আহারে যদি আমাদের বাড়িটা সুন্দর হতো, যদি আমাদের একটা গাড়ি থাকতো! কারন উকিলদের আর যাই হোক সামাজিক স্ট্যাটাস অনুযায়ী ওসব থাকাই স্বাভাবিক! আমাদের কেনো সেগুলো নেই সেটাই বুঝতে পারতাম না । মাঝে মাঝে বাবাকে জিজ্ঞেস করতাম, কেনো আমাদের এ অবস্থা। বাবার সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিলো খোলামেলা, আমাদের সাথে সময় কাটাতে তাকে কোন ক্লান্তি ছুঁয়ে যেতে দেখিনি। তখন তার উত্তর ছিলো, সবার অর্থ হয় না, কেউ কেউ না চাইলেই অনেক অর্থ হয়। অর্থ-সম্পদ না থাকাটা অনেক সময় আশীর্বাদের মতো কাজ করে, কারন দুঃখ ও দারিদ্রের মধ্যেই মানুষ বড় কিছু করে। এরপর সে এই সেই উদারহণ টেনে আনতো। সে সময় এতো কিছু বুঝতাম না, বুঝতাম কেবল আর্থিক টানাপোড়েন ভালো লাগেনা। দুই হাতে পয়সা খরচ করতে না পারলে আবার কিসের ফুর্তি জীবনে! তারপরও বাবার সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠায় অর্থ-সম্পদের প্রতি মোহ কেটে গিয়েছিলো মনের অজান্তেই। জীবনের যেকোন ক্ষেত্রে বাস্তবতা যাচাই করেছি দুইটা প্রশ্ন দিয়েঃ ১) যা করছি/ করতে যাচ্ছি সেটা কি ভয় থেকে করছি? ২) যেটা করছি বা করে যাচ্ছি সেটার পেছনে কি কোন লোভ কাজ করছে? ভয় ও লোভ কাজ করলে সেখান থেকে আস্তে করে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। সচেতন মনে এই reality check করে গেছি সব সময়, আবার মনে মনে বিরক্তি কাজ করতো, কেনো কোনরকমের চিন্তা ছাড়া কিছু করতে পারিনা। চিন্তামুক্ত জীবন কত সহজ, আনন্দময়। এইসব যুক্তি চিন্তা সব সময় মাথায় ঘুরে বলে জীবনটা জটিল ও ক্লান্তিকর হয়ে উঠতো একেক সময়। জীবনে সম্পদশালী হওয়ার নেশা ছিলোনা, নেশা ছিলো নিজেকে জানার, নিজেকে বোঝার চেষ্টায়, যেটা কিনা বাবা মাথায় শুরু থেকেই ঢুকিয়ে দিয়েছিলো! এছাড়াও পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো জগতের বড় বড় মহামনীষীদের সাথে। আরেকটা ব্যাপার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো, পৃথিবিটা অনেক বড়, আমরা কেবল ছোট একটা দেশের এরকম ভাববার কিছু নেই, আর আমাদের শেকড় অনেক গভীরে গাঁথা, তা হলো ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে। আমাদের পরিচয় এমন না যে আমরা কেবল বাংলাদেশী, আমরা আসলে ভারতীয় উপমহাদেশীয়। মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় সংস্কার, বর্বরতার কথাও আলোচনা করতো। ভারতীয় উপমহাদেশীয় সাধু-সন্ন্যাসী, মুনি-ঋষিদের ব্যাপারে জানাতো। জেন্ডার পলিটিক্সের কথা, ধর্মীয় উম্মাদনার কথাও আলোচনা করতো। বাবার সাথে এসব বিষয়ে আলোচনায় আস্তে আস্তে এসবের দিকে আগ্রহ চলে আসে মনের অজান্তেই। এজন্য একটা ব্যাপার হয়েছে এমন যে এরকম বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা না জমলে মন ভরে না, সাংসারিক petty আলোচনা টানেনা। সংসারে ঢুকে যাকিনা হারে হারে টের পেয়েছি, আর মনে হয়েছে আসলে সংসার করার মতো যোগ্যতা তো নেই। কারন সাংসারিক গপ্প, আয়োজন, আলোচনা এসবের কিছুই তো টানেনা, ভাগ্যিস তাও কেউ বিয়ে করার সাহস করেছিলো, বিয়ে করে সংসার করার qualification তো আসলে নেই, imposter syndrome এ ভুগতাম। সংসার জীবনে বড়ই বেখাপ্পা লাগতো।

আজ যখন ফিরে তাকাই তখন মনে হয় ভাগ্যিস কপালগুনে ওমন বাবা পেয়েছিলাম, নাহলে তো সেই সাংসারিক trap এ পড়ে যেতে হতো! যেখানে সবাই বাড়ি, গাড়ি, অর্থ-সম্পদ এসবের প্রতিযোগিতা করে, এসব দেখে মানুষের সামাজিক অবস্থা মাপে। অনেক মাপজোক ও যাচাই বাছাইয়ের পর তারা মিশতে চায়। বিশেষ করে যখন বাড়ি-গাড়ি সুন্দর হয় তখন মানুষের আচরণ পুরোপুরি বদলে যায়, একটু আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয় কিংবা অনেক সময় হিংসা করে, এখনও একইভাবে হাসি পায়। এমন না যে স্বচ্ছলতা উপভোগ করিনা, তবে এসব সাংসারিক তুচ্ছতা আর আলোড়িত করেনা তেমন। দারিদ্রতা কিংবা অর্থ- সম্পদ আমাদের define করেনা, এসব আসলে আমাদের চারপাশের মানুষজনকে নিরীক্ষা করার সুযোগ করে দেয়। সেদিক দিয়ে সবচেয়ে ভাগ্যবান সে যার কোন অর্থ-সম্পদ নেই, কারন সে সময় যারা তার বন্ধু থাকে তারা পুরোটাই নিরেট প্রকৃতির হয়, কোন খাঁদ থাকেনা সে বন্ধুত্বে, তার জীবন হয় সব ধরণের বাহুল্য বর্জিত। সম্পদশালী লোকের জীবন সেদিক দিয়ে বাহুল্যে ভরা, সেখানে কি আসল আর কি নকল সেটা খুঁজে বের করাই মুশকিলের ব্যাপার। লক্ষী ও সরস্বতীর মধ্যে আপাত কোন বিরোধ নেই। তবে যেখানে সরস্বতীর দেখা মেলে সেখানে লক্ষীর দেখা মেলে কদাচিত, সেখানেও মঙ্গল নিহিত থাকে; এই বোধ টা আপাতত হৃদয়ঙ্গম করতে পারি। এজন্যই গুনী লোকজন সব ধরণের বাহুল্য এড়িয়ে গিয়েছে সচেতনে।

Sometimes I think, what am I without all the blessings I have got? I know all these stuff doesn’t define me, I am more than that. And the best part is I love myself unconditionally. It doesn’t depend on external situation.

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75