Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

মুক্তির পথ

অতি নিকট স্বজনদের থেকে শুরু করে পরিচিত মহলের অনেককেই দেখেছি তারা নৈতিকতার মানদন্ডে নিজেদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আবার অনেককেই দেখেছি যারা কেবল moral superiority complex এ ভুগছে। যারা মোরাল সুপিওরিটি কমপ্লেক্স এ ভুগছে তাদের সমস্যাটা কোথায় সেটা আগে বুঝতে হবে। এই কমপ্লেক্সে যারা ভোগে তাদের চিন্তাধারায় শুরুতেই একটা তুলনা চলে আসে। এরপর আসে তাদের মধ্যে যে নেগেটিভ ট্রেইট বা নেগেটিভ characteristics (চারিত্রিক আচরণ) সেগুলো অস্বীকার(deny) করা, অথবা সেগুলো নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগা, লজ্জা পাওয়া, অথবা সেগুলোকে ভীষণভাবে অপছন্দ করা। তারপর তারা প্রাণপনে প্রতিষ্ঠা করতে চায় যে তারা সেইসব অনৈতিক চরিত্রের অনেক উর্ধ্বে। তারা দাবী করে বসে যে সেসব নেগেটিভ বৈশিষ্ট্যগুলো তাদের মধ্যে নেই আরকি। এরপর তারা তুলনায় যায়, মনে মনে কিংবা প্রকাশ্যে। কার কার মধ্যে সেসব নেগেটিভ ট্রেইট আছে সেগুলো তারা খুঁজে বের করে, আর নিজের ভেতর সেসবের আংশিক/কিঞ্চিত পরিমানের উপস্থিতিও তারা অস্বীকার (deny/disown) করতে চায়। এখানে যারা নিজেদের ভালো বলে দাবী করেনা, বরং খারাপ বলে নিজেদের মেনে নেয় তারা বরং সাহসী। তারা তাদের অন্ধকার, অগ্রহনযোগ্য, অনৈতিক দিকগুলো যেগুলো সবাই বর্জন করতে চায় সেসব embrace করেছে, সেইসব ট্রেইট ধারন করেও নিজেকে গ্রহন করতে পেরেছে। এখানে বলতে হয় এখানে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সৃষ্টি-ধ্বংস দুই ধরনের ফোর্স/শক্তির মিলে একটা পরিপূর্ণ পিকচার/চিত্রের রুপায়ন হয়, ছায়া বিহীন আলোর অস্তিত্ব, আলো বিহীন ছায়ার উপস্থিতি সম্ভব? ছায়া জগতকে অস্বীকার করা মানে নিজের অস্তিত্বের অর্ধেক অংশ অস্বীকার করা। যারা নিজেদের খারাপ বলে মেনে নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেক ভালো গুন/বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে। খারাপ মানেই কেউ absolutely খারাপ ব্যাপারটা মোটেও সত্যি হতে পারেনা, আবার ভালো মানেই কেউ পুরোপুরি ভালো সেই ধারণাও ভ্রান্তিমূলক হতে পারে।

এই moral superiority complex এ যারা ভুগছে তারা এক কথায় বলা চলে সামষ্টিকভাবে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশী করছে। তারা নিজেদের সাথে নিজেরা যেমন প্রতারণা করছে, অন্যদের সাথেও। তারা এই ছায়ার দিকটা কোনভাবেই acknowledge করতে চায় না, এড়িয়ে যেতে চায় প্রাণপনে, আর তাদের প্রধান অস্ত্র হয়ে দাড়াঁয় অন্য যার যার মধ্যে সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায় তাদের দিকে আঙ্গুল তোলা। এরকম কিছু মানুষ আছে আমার নিজের জীবনেও যারা এই কমপ্লেক্সে ভুগছে, ছোটবেলা থেকেই এরকম একজনকে আমার ভীষণ অপছন্দ ছিলো। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে as if he is consealing his dark/shadow part very carefully যা তখনকার সময়ের আমার কাছে বোঝার ক্ষমতায় বা ভাষায় প্রকাশ করার মতো ছিলোনা। আমি নিজেই অবাক হতাম, সবাই যাকে পছন্দ করছে, সবাই যাকে ভালো বলছে, সে নিজেও যখন আমার সাথে খারাপ কিছু করেনি বরং অনেক স্নেহ করে তারপরও তাকে আমার এতো অপছন্দ কেনো?! তারপর এক সময় ভাবলাম হয়তো সে আর আমি একই রকম এজন্য, কারন সমধর্মী বল একে অপরকে বিকর্ষণ করে। এইসব চিন্তা করে আমি মনে মনে নিজেকেই ঘোরতর অপছন্দ করা শুরু করলাম কারন আমি খেয়াল করলাম তার মতো সবাই মনে করে আমি অনেক ভালো মেয়ে, কারো কোন রকম খারাপ আমি করতে পারিনা, প্রায় সবাই আমাকে পছন্দ করছে। তীব্রভাবে নিজেকে অপছন্দ করার মুহূর্তে আমি চেষ্টা করতাম মানুষের চোখে মন্দ হতে, তবে এতোটা মন্দও না যাতে নিজের বা অন্যের ক্ষতি হয়ে যায়। আর হ্যা বলবো এই সময়েই আমার প্রকৃত স্বত্ত্বা আমি খুঁজে পেয়েছি, কারন আমার ভালো-মন্দ, আলো-ছায়া, কমতিগুলো আমি embrace করতে শিখেছি (without any shame) অস্বস্তি ছাড়া। আমার ডার্ক সাইড ও ব্রাইট সাইডের (intregation process) সমন্বয় সাধনের প্রক্রিয়া এভাবেই শুরু হয়েছিলো। আর যখন কেউ এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়, সে তার সীমাবদ্ধ চিন্তা থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত হয়ে যায়। তখন সে অন্যদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অন্যায়গুলোর উৎস কি তা বুঝতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে সাবধান হয়ে যেতে পারে। যখন একজন আরেকজনকে বুঝতে পারে তখন সে অন্যের সীমাবদ্ধ আচরনগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার সুযোগ পায়। কারন সে শিখে যায় অন্যকে তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা করতে অপারগ হওয়া মানে নিজেই নিজের প্রতি ক্ষমাহীন হওয়ার মতো। অন্যভাবে নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভালো-মন্দ, limiting চিন্তা এসব ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে আমরা অন্যদের সীমাবদ্ধ আচরণের কারন উপলব্ধি করে প্রকৃত মুক্তির পথ খুঁজে পেতে পারি।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75