Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

Tribal Religion

Divide & Control

আমার নানি ও দাদীর প্রজন্ম যদি বিচার করতে বসি তাহলে আমাদের তিন প্রজন্মের মধ্যে তারাই সবচেয়ে ভালো সময় পার করে গেছে। আমার নানীর জীবিত সন্তানের সংখ্যা ৯ জন, আর দাদীর জীবিত সন্তানের সংখ্যা ছিলো ৯+২(non-biological) = ১১ জন।আমরা জানি প্রানীরা তখনই সংখ্যা বৃদ্ধি করে যখন তারা প্রাচুর্যের মধ্যে বসবাস করে। পেনিসিনিল আবিস্কার না হলে হয়তোবা নানি-দাদীর এতো সন্তান টিকে যেতে পারতো না! এখন পেনিসিলিনের আশীর্বাদ হোক বা অভিশাপ, আমাদের নানি-দাদী প্রজন্মের সন্তান জন্ম ও সারভাইভ করার হার সবচেয়ে বেশী। ছোটবেলায় আমাদের পাঠ্যবইয়ে দেখতাম জনসংখ্যা বিস্ফোরন ও তার জন্য ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কবানী। আমাদের মা-খালার প্রজন্মে “ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক, দুই সন্তানের অধিক নয়” , “দুই সন্তানের পরিবার সুখী পরিবার” ইত্যাদি ইত্যাদি বহু শ্লোগান প্রচলিত ছিলো। বাস, ট্রেন, জাহাজে উপচে পড়া মানুষ দেখে দেখে ছোট্ট মানসপটে ছোট দেশের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা হয়েছিলো। তখন মনে হয়েছিলো বিয়ে না করলে কিংবা বাচ্চা-কাচ্চা আর না নেয়ার পরিকল্পনা করলেই তো সমস্যা মিটে যায়। ছোট্ট মনে ভাবনা থেকে সেই সমস্যা থেকে সমাধান খুঁজতাম। আমাদের যার যার পক্ষ থেকে যা করতে পারি তা হলো বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা না বাড়ানোই ভালো হবে!

সেই বাল্যকালের সামষ্টিক যে ভীতি তা মনে গভীর রেখাপাত করেছিলো, তারচেয়েও বেশী রেখাপাত করেছে এই পরিণত বয়সে বিদেশে এসে। বিদেশে এসে দেখি এদের অন্য সমস্যা, তা হলো এদের জনবলের অভাব, এদের মানুষ দরকার। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষের অভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে, দেশগুলোর অচলাবস্থা। বাইরে থেকে দেখতাম জার্মানির মতো রক্ষনশীল দেশে কাতার কাতারে রেফুউজি নিচ্ছে সে দেশের লোকজনের চরম আপত্তি স্বত্ত্বেও। জার্মান অবশ্য ইউরোপের সব দেশের মধ্যে রক্ষনশীল কিংবা রেসিস্ট দেশ বলে পৃথিবীব্যাপী ব্যাপকভাবে পরিচিত (এ বিষয়ে অন্য আরেক সময় বলা যাবে)। এই সুবাদে মার্কেলা এঙ্গেলা ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে, একইসাথে নিজের দেশে বেশ সমালোচিতও হয়েছেন।

যুদ্ধের পর নতুনভাবে দেশ গড়ার জন্য কিছু অতিথি কর্মী ইটালি ও তুরস্ক থেকে জার্মানিতে এসে স্থায়ী হয়েছিলো। যুদ্ধের পর জার্মানিতে “wirtschaftswunder”-economic miracle এর কল্যানে বাড়তি জনশক্তির প্রয়োজন দেখা দেয়। ইউরোপ ও এর আশেপাশের দেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হলেও যখন মিডল ইস্ট থেকে রিফিউজি নেয়া হয়েছিলো স্থানীয় জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিলো, সরকারের নীতি নিয়ে তীব্র সমাচোলানা হয়েছিলো। তারপরো জার্মানি দিনদিন অভিবাসী শ্রমিক নিয়েই চলছে! এর পেছনের কারন খুজতে গিয়ে জানতে পারলাম প্রাচীন রোমের কাহিনী, যে সভ্যতা দক্ষ নেতৃত্ব ও জনবলের অভাবে ধীরে ধীরে পরিত্যাক্ত নগরীতে পরিণত হয়েছিলো। যেকোন দেশের সরকার অনেক চিন্তাভাবনা করেই বিভিন্ন পলিসি নিয়ে থাকে, জার্মানীও এর ব্যতিক্রম নয়। জার্মান কেনো এতো শ্রমিক নিচ্ছে? আরেকটা উত্তর হতে পারে জার্মানী যেসব শ্রমিক তৈরী করছে তাদের সবাই জার্মানিতেই রয়ে যাচ্ছেনা, তাদের অধিকাংশই আরো বেশী অফারে বাইরের দেশগুলোতে মাইগ্রেট করছে, তাই জার্মান বাধ্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে অপেন থাকতে। মুক্ত বাজার অর্থনীতির কল্যানে বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ ও প্রতিযোগীতা গিয়েছে বেড়ে।

যাই হোক মূল কথায় আসি জার্মানিতে এসে দেখি ওদের লোকের অভাব, কারন হলো চাহিদার তুলনায় যোগান কম। এরপর জানতে পারি শুধু জার্মানি এই সমস্যায় পড়েছে তা নয়, ইটালি, পর্তুগাল, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান, চীন এরকম বহু দেশে জনবলের বড় অভাব। তুলনামূলকভাবে এশিয়ার এই দেশগুলোয় জন্মহার একেবারে শূন্যের কোঠায়। ভবিষ্যতে এইসব দেশ চরম লোকসংকটে ভুগবে। ইউরোপের আশেপাশের অনেক দেশ যেখান থেকে জনবল অধিকতর অবস্থাপন্ন দেশে মাইগ্রেট করেছে সেসব দেশ ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে কাঠামোগত কারনে একমাত্র লোকবলের অভাবেই।

মুদ্রার দুই পিঠ দেখা হয়ে গেছে জীবনে, একদিকে অধিক জনসংখ্যা জনিত সমস্যা, অন্যদিকে জনসংখ্যার অভাব। ইদানিংকালে অনেক বিশিষ্টজন প্রচার করছে যে প্রতি দম্পতির অন্তত চারজন সন্তান থাকলে ভবিষ্যত পৃথিবী জন সংকটে ভুগবেনা। তবে আশার কথা হলো জনবিস্ফোরন হোক কিংবা জনসংকট এইসব থিওরী নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আমাদের মনোযোগ দেয়া দরকার কোয়ালিটিতে, যেসব থিওরী মানুষের মধ্যে আশা না জাগায়, মানুষকে আশ্বস্ত করতে না পারে সেসব থিওরী এতো সিরিয়াসলি নেয়ার দরকার নেই। জন বিস্ফোরনের আতংকে বাচ্চা না নেয়া আবার জনসংকটের আশংকায় অধিক বাচ্চা নেয়ার দায় নিয়ে নেয়া দুটোই মানুষের সার্বিক কল্যান ব্যাহত করে।

ভালোভাবে অপারেট করার জন্য মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পরিবেশ হলো গোত্র প্রথা। আগে মানুষ গুচ্ছ গুচ্ছভাবে বসবাস করতো, তারও আগে মানুষ যাযাবর জীবন যাপন করেছে, সেখানেও মানুষ দলবদ্ধ হয়েই থাকতো। আধুনিককালে মানুষ individualism এ বিশ্বাসী। “একতাই বল” এমন প্রবাদ আমরা শুনে বড় হয়েছি, কিন্তু বর্তমান জীবন ধারায় (modern system) মানুষের পক্ষে একতাবদ্ধভাবে থাকা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে, কারন একতাবদ্ধ হয়ে যারা থাকতে চায় তাদেরকে ম্যানিপুলেট/কন্ট্রোল করা সহজ নয়। আধুনিক সিস্টেমের দাবী দূর্বল একাকী, মানসিকভাবে অসুস্থ, চিন্তাশীলতায় অক্ষম, কনজ্যুমার ও অসন্তুষ্ট(discontent) মানুষ। আর তাই এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে করে মানুষ নিজেকে নিয়ে অবসেসনে ভোগে, কেবল নিজের স্বার্থ খোঁজে, অন্যকে নিজের ইচ্ছের দাস বানিয়ে রাখতে চায়, তাদের ব্যবহার করতে চায়, অন্যদের মন্দ বানিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে পাগল বানিয়ে (মা-বাবা, ভাই-বোন, শুশুর-শাশুড়ি, ছেলে- ছেলের বউ, ননদ-দেবর, মেয়ে-মেয়ে জামাই, প্রতিবেশী-বন্ধুমহল) তাদের ভালো-মন্দের ব্যাপারে নির্বিকার থেকে স্বাতন্ত্র্যভাবে বসবাস করতে চায়, তাহলেই তাদেরকে ডোমিনেট করা সহজ হয়ে যায়।

মনে পড়ে গেলো সেই old British strategy’র কথা: divide & conquer, সত্যি আমরা আধুনিক কালের মানুষের এই ফাঁদেই পা দিয়েছি, বুঝে কিংবা না বুঝে।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75