Physical Address

304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

to be whole again

বিভ্রান্ত পুরুষ শক্তি ও নারী শক্তির ব্যাপক অনুপস্থিতি 

যখন (ফেমিনিন এনার্জি) নারী শক্তি সুরক্ষা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তখনই তারা পুরুষ শক্তি ধারন করে। ড্রাইভিং এর দায়িত্ব যখন একজন পুরুষ নিতে ব্যার্থ হয় তখনই নারী গাড়ির পেছনের সিট থেকে উঠে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে যায়। গাড়ি যে ভালো চালাতে পারে সেই একমাত্র বলতে পারবে, কেউ যখন ভালো গাড়ি চালাতে না পারে তখন back seat এ চুপচাপ বসে থাকাটা কতটা অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাই অনেক সময় এমন ব্যবস্থার প্রচলন হয় যেখানে back seat এর যাত্রীদের গাড়ী চালাতে দেয়া হয়না, তাদের গাড়ি চালানো শিখতেও দেয়া হয়না, যাতে করে তারা চুপচাপ গাড়ির ড্রাইভারকে মেনে চলে, তা সে ড্রাইভার যত খারাপভাবেই গাড়ি ড্রাইভ করুক না কেনো।

নারীর ক্ষমতায়নের শুরু হয়েছিলো সারা বিশ্বজুড়ে। নারীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যখন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হবে তখনই মিলবে তাদের মুক্তি। আসলেই কি নারীর মুক্তি মিলেছে? নারীর মুক্তি মিলেছে কিনা সেটা সঠিকভাবে বলতে না পারা গেলেও এটা বলা যায় যে নারীর জীবনে জটিলতা ও দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। নারীকে এখন ঘরে বাইরে সবখানে প্রমান দিতে হয়, যোগ্যতার, দক্ষতার। তথাকথিত সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে নারী এখন পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। নারী যেমন সচরাচর পুরুষের পাশে থেকে তাকে সহায়তা জুগিয়েছে, সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে; নারী যখন ড্রাইভিং সিটে বসে, ঠিক একই রকমের সাপোর্ট ও নির্ভরতা সে পুরুষের থেকে দাবী করে/ খোঁজে। এখানেই বড় ভুল হয়ে থাকে অনেক নারীর, সে যেমন যুগযুগ ধরে একজন পুরুষোচিত পুরুষকে বেছে নিতে চেয়েছিলো যাতে করে তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, যাতে করে একটি সুরক্ষিত বলয়ে সে তার সৃষ্টিশীলতার চর্চা করতে পারে, সন্তান জন্মদান ও তাদের যথাযথ প্রতিপালন করতে পারে। সেই পুরুষোচিত পুরুষটি তার পুরুষ শক্তির বিপরীতে নারী শক্তি নিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসা নারীকে সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে কতটুকু প্রস্তুত? পুরুষের চাহিদা কি? পুরুষের চাহিদা বা তথাকথিত পুরুষ শক্তির স্বাভাবিক চাহিদা নারীর অকপট সমর্থন, সহযোগিতা ও পুরুষ সঙ্গীর উপর নির্ভরতা। অন্যদিকে নারীর বা নারী শক্তির স্বাভাবিক চাহিদা হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর যথাযথ যোগান, নিরাপত্তা, নিশ্চিয়তা ও সুরক্ষা।

আধুনিক সময়ের এসে আধুনিক সামাজিক পরিকাঠামোয় পুরুষের ভূমিকা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। পুরুষের ভূমিকা কি হবে বা নারীর ভূমিকা কতটুকু হবে সেটা পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার নয়। পরিবার ভেদে তাদের দায়িত্ব পুরোপুরি ভিন্ন। অনেক পরিবারে পুরুষ তাদের নারীর চাহিদামতো তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবারে পুরুষ রয়েছে নারীর ভূমিকায়, নারী পালন করছে পুরুষের ভূমিকা। অনেক পরিবারে দেখা যায় পুরুষ একাধারে নারী ও পুরুষের ভূমিকা সমানভাবে পালন করে যাচ্ছে, যেখানে নারীটি পুরোপুরি বা আংশিকভাবে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, আবার অনেক পরিবারে নারী সবদিক সামাল দিচ্ছে যেখানে তাদের পুরুষ অনুপস্থিত বা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। মোটকথা দেখা যাচ্ছে, নারী-পুরুষের ভূমিকা বা দায়িত্ব পরিবার ভেদে একেবারেই ভিন্ন রকমের হয়ে গিয়েছে।

সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার হাওয়া পারিবারিক আবহে এসে কেমন রুপ ধারন করবে তা ব্যক্তিভেদে যেমন ভিন্ন হবে, পরিবারভেদেও হবে ভিন্ন। তবে বর্তমান যুগে এসে নারীদের যেখানে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ার কথা সেখানে দেখা যাচ্ছে পুরোপুরি উল্টো চিত্র। তারা যেনো আরও একটি বিশাল খাঁচায় বন্দী হয়ে গিয়েছে, আর সেই খাঁচাটি তাদের নিজেদের হাতেই গড়া যেনো। সমস্ত শক্তি নিয়ে ক্ষমতার চূড়ায় বসে সে যেনো অসহায়, তার কাঁধে বিরাট বোঝা যা বয়ে বেড়ানোর শক্তি তার থাকলেও সহায়তা সে যেমনটি আশা করছে তেমনটি সব সময় পাচ্ছে না। অনেক সময় স্বেচ্ছায় অনেক সময় অনিচ্ছায় উটের জকি হয়ে প্রতিযোগিতায় নামলেও নারী ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কিভাবে নির্ভরতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে তার জীবনে, কিভাবে মিলবে জীবনে স্বস্তি ।

জহির রায়হানের “হাজার বছর ধরে” বুড়ো মকবুলের কথা মনে পড়ে যায় যেখানে, তিন বউয়ের সংসার চালানোর ভার সামলাতে না পেরে রাতের আধাঁরে বউদের কাঁধে লাঙ্গল তুলে দেওয়ার মতো পরিকল্পনার করে সে, এ যেনো অযোগ্য পুরুষ শক্তির নারী শক্তির উপর সংসারের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা, পুরোটাই প্রতিকী ব্যাপার সেপার। অযোগ্য বা ব্যার্থ পুরুষশাসিত সমাজে নারীকে অর্থ উপার্জনে যেমন একদিকে উৎসাহিত করে অন্যদিকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে অনুৎসাহিত করে।উভয় ক্ষেত্রেই নারীর ইচ্ছে অনিচ্ছের প্রতি কোনরুপে তোয়াক্কা না দেখিয়েই। মজার ব্যাপার হলো নারী এখানে সিদ্ধান্ত নিবে সে কি করতে চায়, যা কিনা খুবই কদাচিৎ ঘটে থাকে। অনেক নারী আছে তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই অর্থনৈতিক মুক্তি খোঁজে না, অনেক নারী আছে প্রয়োজনে সংসার ছেড়ে দিবে তারপরও সে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। এখানে নারীর যেমন ঘরের বাইরে কাজ না করেও সুখী হওয়ার অধিকার আছে, তেমনি যারা বাইরে কাজ করছে তাদেরও সুখী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে পুরুষেরা পড়েছে বিপদে তাদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে গাধা নিয়ে চলা সেই মরুযাত্রীর মতো। মরুযাত্রী যখন গাধার পিঠে চলে তখন যেমন তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, গাধার পিঠে বোঝা চাপিয়ে ও তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, আবার গাধার পিঠে না চড়ে বা বোঝা না চাপালেও তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এই পুরো ব্যাপারটা আসলে পুরুষ শক্তির জন্য বিভ্রান্তিকর। বিভ্রান্ত পুরুষ শক্তি তাই হয়ে উঠেছে শক্তিহীন ও দূর্বল। অন্যদিকে বিভ্রান্ত দূর্বল পুরুষ শক্তির যোগান দানে ব্যার্থতা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে না পারার কারনে নারী শক্তি আজ পুরুষ শক্তির ধারক বাহক হয়ে গিয়েছে। যার ফলে নারী শক্তির অনুপস্থিতি দেখা যাচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে।

tamziadmin
tamziadmin
Articles: 75