Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

বাঙ্গালীর অতীত স্মৃতি রোমন্থনে জুড়ি নেই। আর কিছু না পারলেও এই একটা জিনিস বাঙ্গালীরা খুব ভালো পারে। ‘গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ’, ‘যায় দিন ভালো, আসে দিন মন্দ’, ‘আমার সন্তান থাক দুধে ভাতে’ এইসব বাণী শুনে শুনে বড় হয়েছি। এক সময় ধারণা ছিলো হয়তোবা সামনে মন্দ ছাড়া ভালো কিছু আর হওয়ার আশা নাই, নাহলে সবাই এরকম কথা বলে কেনো?! বড় হয়ে আস্তে আস্তে বুঝতে পারি যে বাঙ্গালীরা বাই ডিফল্ট অলস, খুব বেশী প্রয়োজন না হলে আই মিন বাগে না পড়লে বাঙ্গালীরা কাজ করতে চায় না, শুয়ে বসে মায়ের হাতে দুধ-ভাত খেয়ে মায়ের কোলে শুয়ে থাকতে চায়! এই যে চাওয়া এটা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার মধ্যে দেখা যায়। আমার কথা হলো গোলা ভরা ধান, আর পুকুর ভরা মাছ এই প্রজেক্টে এখন আর কয়জন আছে, সবাই তো চাকরি-বাকরি, ব্যাবসা-বাণিজ্য করে। আমার নানা বাড়ির কথাই ধরি, সব মামা-খালারা যে যার মতো পেশা বেছে নিয়েছিলো, খালি এক মামার সুযোগ ছিলো খেত-খামার, চাষ-বাসের সুযোগ, কিন্তু সেই মামা ছিলো আবার বেহিসাবী, খেত -খামারের কাজ তার কাছে uncool ও ছিলো বলা চলে, অন্যরা তাকে নানাভাবে সহায়তা করলেও সে সব সময় লসে থাকতো, এভাবে আস্তে আস্তে জমি-জমা বেচতে বেচতে কিংবা বর্গা দিতে দিতে এখন আর তেমন কোন ফসল হয়না, তারা বাজার থেকেই সব কিনে খায়। আই মিন সে পেশায় আবার প্রধান শিক্ষক, এই জমি চাষ-বাস তার সাইড প্রজেক্ট, কিংবা বলা চলে দুইটাই তার সাইড প্রজেক্ট, তার কি যে ভালো লাগে তা হয়তোবা সে নিজেও জানেনা। এমন লোক আনন্দ ফূর্তিতে মেতে থাকতে পছন্দ করে, কিন্তু কোন একটা গঠনমূলক কাজে তাকে দেখা যাবেনা, অতীত তার কাছে একদিকে গৌরবের অন্যদিকে লাঞ্ছনার। তবুও সে অতীতকেই গৌরবান্বিত করে দেখতে পছন্দ করে, কারন তার ভবিষ্যত ভাবনা তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। বর্তমান সে এটা সেটা করে কাটিয়ে দেয়, নির্বিঘ্নে সময় পার করতে পারলেই যেনো সে হাফ ছেড়ে বাঁচে। আর একটা ব্যাপারও হয়তো আছে, সে জীবন সংসারের বোঝা বইবার ক্ষমতা রাখেনা, সংসারের ঘানী টানা থেকে সে দিনরাত মুক্তি কামনা করে! এই একটা সমস্যা আমার নিজের মধ্যেও খেয়াল করলে খুজে পাই, বাল্যকালকে সবচেয়ে সেরা মনে হয়, বিগত অতীত দিনগুলোকে বেশী রঙ্গীন মনে হয়, বর্তমান কোন রকমে পার করে দিতে পারলে যেনো বাঁচি, আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে ভয় আসে মনে।
সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে যা বুঝি তা হলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই এমন, কেউ কেউ এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতন থাকে, তাই তারা একটা স্ট্রাকচার বেছে নিয়ে সে অনুযায়ী চলে। যারা নিজেদেরকে কোন স্ট্রাকচারে ফেলতে পারেনা তারাই ওমনধারা চিন্তা ভাবনায় মেতে থাকে, বাঙ্গালীরা বেশীরভাগই ওমন, কারন কি সেটা চিন্তা করতে গিয়ে মনে হয়েছে বাঙ্গালী তার নিজের সংস্কৃতি নিয়ে যেমন গর্ব করে অন্যদিকে নিজেদেরকে লাঞ্ছনার শিকার হিসেবে দেখে, বাংলাদেশী বাঙ্গালীরা পশ্চিম বাংলার মানুষের কাছে যেমন তেমন পাত্তা পায়নি, সেই বাঙ্গালিরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও অন্য মুসলিমদের কাছেও তেমন একটা পাত্তা পায় না। বাঙ্গালীরা গরীবদের পাত্তা দেয় না, আবার ধনীদেরকেও ভালো চোখে দেখে না, যারা ধনীদের সাথে চলে তাদেরকে পা-চাটা কুত্তা মনে করে। বাঙ্গালী কাউকেই পাত্তা দেয় না, কারন বাঙ্গালী পাত্তা দেয়া মানে মনে করে অন্যদেরকে মাথায় তুলে নাচার সুযোগ করে দেয়া, নাহয় অন্যদের মাথায় উঠে নাচানাচি করার অবাধ স্বাধীনতা। বাঙ্গালিরা নিজেদের অধিকার আদায়ে জীবন দিতে জানে, কিন্তু বাঙ্গালীর ভিক্ষুকের ভিক্ষার থালায় থাবা দিতে লজ্জা করেনা, গরীবের শ্রমার্জিত মজুরি দিতে কার্পণ্য দেখায়। বাঙ্গালী বেশী চায় না আবার চাইলে অনেক বেশী চায় যা বাস্তবসম্মত নয়। বাঙ্গালীর মধ্যে যে দ্বৈত স্বত্তা এটা তাদের জীবনের প্রায় সবখানেই দেখা যায়, বাঙ্গালী যখন কাউকে সম্মান করে তাকে পুজো দেয়, এই বাঙ্গালীই আবার তাকে পায়ে পিষে মারতে চায়। খুব ছোট পরিসরেও যদি আসি, যেমন যদি কারো চুলের প্রশংসা করা হয় তখন সে হড়হড় করে একটানা বলে চলেঃ এখন আর কি চুল আছে তেমন, আগে কত চুল ছিলো, মাথায় চিরুনী ঢুকতো না! ব্লা ব্লা ব্লা। কেউ ভালো কিছু করলে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর রেডি, এইটা আবার তেমন কি! আমার বাবার বাবা হেন করেছে, তেন করেছে। এখন রুপের কথায় যদি আসি তখন অনেকে শুরু করে দেয় অতীত রোমন্থন আরে এখন আর কি দেখবেন আগে কি ছিলাম, রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে পারতাম না রুপের আগুনে। অনেক ভাই পর্যন্ত তার বিগত যৌবনের কথা স্মরণ করে বলে আর বইলেন না আগে যে কি শক্তি ছিলো গায়ে, পাড়ার সব মেয়ের পেছনে ঘুরঘুর করতাম তারপরও টায়ার্ড হতাম না ইত্যাদি ইত্যাদি।