Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124
Physical Address
304 North Cardinal St.
Dorchester Center, MA 02124

ফেমিনিন এনার্জি বা নারীশক্তি মূলত দুই ধরনের শক্তির সমন্বয়ে পরিপূর্ণ রুপ পায়ঃ লাইট ফেমিনিন এনার্জি ও ডার্ক ফেমিনিন এনার্জি। সনাতনী ধর্মে এই দুই শক্তিরই পূজো চলে, তবে লাইট ফেমিনিন এনার্জির ট্রেইট ধারন করে এমন নারীরাই সমাজ-সংসারে কাংখিত, ডার্ক ফেমিনিন এনার্জির নারীদের পূজো দেওয়া হলেও সেখানে এক ধরনের আতংক কাজ করে, ওমন শক্তিধর নারীরা সংসারে অনাকাংখিত। মা কালীর নগ্ন রুপ, হাতে খরাগ, গলায় কাটা মুন্ডুর মালা, পায়ে লাল জবা, জিভ বের করা করালবদনা, হিংস্র, ভয়ঙ্কর দর্শন; কালীকে তাই সমাজের মূলস্রোতে পূজো দেওয়া হতো না। সমাজ-সংসারের চাহিদার শীর্ষে ওই মা লক্ষী কিংবা সরস্বতী দেবী। মা কালীকে যদিও মূল স্রোতে গ্রহণ করা হয়েছে ধীরে ধীরে সেখানেও আছে নানান সামাজিকতার বহর, নগ্ন মা কালীর অংগে জড়ানো হয় বসন। জিব বের করা কালী মূর্তির পেছনে রয়েছে গভীর জাগতিক দর্শন যেখানে মা কালীকে তুলনা করা হয়েছে নিরাকার অনন্ত ব্রহ্মের সাথে।
এই যে নারীশক্তির ভিন্ন রুপ আমরা দেখি এর মধ্যে মা লক্ষী সাংসারিক পরিমন্ডলে বেশী কাংখিত, দেবী সরস্বতীকে যদিও ভক্তি করা হয় তবে সাংসারিক প্রয়োজনে খুব একটা কাজের না, বীণা হাতে সরস্বতী ভাবের জগতে ডুব দিলে সংসার কে সামলাবে? অন্নপূর্ণা দেবীর চাহিদা আছে, প্রেমের দেবী রাধা তারও বিশেষ চাহিদা আছে তবে বাঙ্গালীর পূজাচারে সর্বাধিক গৃহীত হলো দেবী দূর্গা, যার দশ হাত, যে কিনা দশ দিক সামলানোর ক্ষমতা রাখে, তাই হয়তো মা দূর্গার স্থান হয় পূজো মন্ডপের কেন্দ্রস্থলে যা আসলে এক অর্থে কার্যকরী; কারন সকল নারীর মনের অগোচরে বাসনা থাকে মা দূর্গার মতো সর্ববিষয়ে পটিয়সী হয়ে ওঠা, কারন সমাজ সংসারের তেমনটাই চাহিদা।
মজার ব্যপার হলো বেদান্ত যুগে সনাতন ধর্মে কোন ধরনের দেব-দেবীর প্রতিমা ছিলোনা, পুরানের যুগে মানুষ তার কল্পনা ও দর্শন কাজে লাগিয়ে প্রতীকি রুপে দেব-দেবীর প্রতিমা রুপ দেয়।
উদাহরনস্বরুপঃ মা কালী জিবে কামড় দিয়ে আছে এর ব্যাখ্যা সাধারন ধর্মাম্বলীর কাছ থেকে জানা যায় যে, অসুর দমনে ক্রোধে উন্মত্ত মা কালী নগ্ন রুপে শিবের সামনে যখন পড়েন তখন তিনি লজ্জায় জিব বের করে ফেলেন। আবার দার্শনিক আলাপে উঠে আসে যে, দেবী মা কালীর জিবে কামড় দিয়ে থাকার অর্থ আসলে ত্যাগের মাধ্যমে ভোগকে দমন করার নিরন্তর প্রচেষ্টা।
তার মানে আসলে বোঝা যায় বেদ-পুরাণের শাস্ত্রীয় জ্ঞান সাধারনের বোধের বাইরে, তারা তাদের সাধ্যমতেই দেব-দেবীর পায়ে ভক্তি নিবেদন করে, তাদের মতো করেই প্রতিমার প্রতীকি অর্থ বের করে নেয়। পূজাচার আসলে অনেকটা শিল্পকর্মের মতো, যে যার মতো বুঝে নেয়, শিল্পীর কাজ কেবল তার নিজের জ্ঞান, আবেগ- অনুভূতি শিল্পকর্মে তুলে ধরা, বাকীটা ভক্ত-দর্শকেরা যে যার মতো করে বুঝে নেয়।
একই সীমাবদ্ধতা আমরা দেখি মৌখিক কিংবা লিখিত রুপে কোনকিছু বোঝানোর সময়েও। যে কখনো সমুদ্র দেখেনি তাকে বর্ণনা করে কতটুকুই বা বোঝানো সম্ভব যে সমুদ্র আসলে কেমন দেখতে? যে অন্ধ তাকে কি করে বোঝানো সম্ভব যে বক আসলে দেখতে কেমন? ফান্ডামেন্টাল যত ধর্ম আছে সেসব ধর্মের যত নবী-পয়গম্বর তারা নিজেরা যতটুকু বুঝেছেন, ততটুকু অন্যদের বুঝিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা তারা করেছেন কিন্তু সেখানেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা। তাই এসব ধর্মাম্বলীদের মধ্যেও আমরা বিভিন্ন দল ও মতভেদ দেখি যেখানে একদল অন্যদলকে নাচক করে দিতে চায়।
এখন কথা হচ্ছে লাইট ফেমিনিন এনার্জি ও ডার্ক ফেমিনিন এনার্জি দিয়ে শুরু করে আলোচনা আসলে কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। লাইট ফেমিনিন এনার্জি যেমন প্রতিটি নারী অস্তিত্বে কাম্য অপরদিকে ডার্ক ফেমিনিন এনার্জিকে কেনো এতো ভয় করা হয়। ডার্ক ফেমিনিন এনার্জির কোন প্রয়োজনীয়তা নেই? অবশ্যই এর প্রয়োজনীয় অনেক দিক আছে যা কিনা আমরা ভয় করে অস্বীকার করতে চাই। ডার্ক ফেমিনিন এনার্জির ট্রেইট হলো অথেন্টিক(authentic) , নির্ভীক(fearless), প্যাশনেট(passionate), আত্নবিশ্বাসী(confident), মুক্ত ও স্বাধীন(wild&free), শক্তি(power) ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে লাইট ফেমিনিন এনার্জির ট্রেইট হলোঃ ধৈর্য(patience), elegance, ক্ষমাশীলতা(forgiveness), যত্নশীলতা(nurturing), সরলতা(innocence), শান্তি (peace) ইত্যাদি ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে লাইট ফেমিনিন এনার্জির যতটা চাহিদা ততটা চাহিদা ডার্ক ফেমিনিন এনার্জিধারী নারীদের নেই, তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেনো। যেহেতু চাহিদা অনুযায়ী যোগান হয় তাই নারীরাও চাহিদামতো যোগান দিয়ে যাচ্ছে, যারা চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিচ্ছেনা তারা সমাজ সংসারে এক নিরন্তর যুদ্ধে শামিল হয়েছে। লাইট ফেমিনিন এনার্জি ধারন করে যেসব নারী কিংবা যারা অন্তত ভাণ ধরে যে তাদের মধ্যে কোন ডার্ক ফেমিনিন এনার্জি নেই তারা সমাজে বেশীরভাগক্ষেত্রেই বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে, অন্যদিকে যারা পিতৃতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় শক্তিতে আপোষহীন থাকতে চাচ্ছে তারাই ক্রমাগত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনপাত করছে। Divine feminine energy হলো মূলত এই দুই শক্তির সমন্বিত রুপ, এই দুই শক্তির মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে নারীশক্তির পূর্ণরুপ প্রতিষ্ঠা পায়। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করা জরুরী পুরুষশক্তি এখানে কোন বিরুদ্ধশক্তি নয়, কিংবা প্রতিপক্ষ কোন শক্তি নয় বরং সহযোগী শক্তি, এখানে পুরুষশক্তির প্রতি নারীশক্তির সহানুভূতিশীল মনোভাব রাখাটা জরুরী। পুরুষশক্তি যদি হয় মূর্ত রুপ নারীশক্তি সেখানে বিমূর্ত রুপ। নারিশক্তিকে তুলনা করা যায় বয়ে চলা নদীর মতো, যেখানে নদীর গতিপথ নদী নিজেই বেছে নেয়, যেখানে বাইরের কোন শক্তি নদীর গতিপথ রোধ করলে নদী তার ভয়ঙ্কর রুপ ধারন করে সেই শক্তির মোকাবেলা করে কিংবা স্রোত হারিয়ে নির্জীব হয়ে পড়ে যা কিনা কোনভাবেই কাম্য নয়।